হরিমোহিনী তাহার উৎসাহকে উদ্দীপিত করিয়া কহিলেন, “পাকা বৈকি। সমস্তই পাকা।”
ঘরের কড়িগুলা বেশ মজবুত শালের এবং দরজা-জানলাগুলো আমকাঠের নয়, ইহাও সে লক্ষ করিয়া দেখিল। বাড়ির দেয়াল দেড়খানা ইঁটের গাঁথনি কি দুইখানা ইঁটের তাহাও তাহার দৃষ্টি এড়াইল না। উপরে নীচে সর্বসমেত কয়টি ঘর তাহাও সে প্রশ্ন করিয়া জানিয়া লইল। মোটের উপর জিনিসটা তাহার কাছে বেশ সন্তোষজনক বলিয়াই বোধ হইল। বাড়ি তৈরি করিতে কত খরচ পড়িয়াছে তাহা আন্দাজ করা তাহার পক্ষে শক্ত; কারণ, এ-সকল মাল-মশলার দর তাহার ঠিক জানা ছিল না। চিন্তা করিয়া, পায়ের উপর পা নাড়িতে নাড়িতে মনে মনে কহিল, ‘কিছু না হোক দশ-পনেরো হাজার টাকা তো হবেই।’ মুখে একটু কম করিয়া বলিল, “কী বল বউঠাকরুন, সাত-আট হাজার টাকা হতে পারে।”
হরিমোহিনী কৈলাসের গ্রাম্যতায় বিস্ময় প্রকাশ করিয়া কহিলেন, “বল কী ঠাকুরপো, সাত-আট হাজার টাকা কী! বিশ হাজার টাকার এক পয়সা কম হবে না।”
কৈলাস অত্যন্ত মনোযোগের সহিত চারি দিকের জিনিসপত্র নীরবে নিরীক্ষণ করিতে লাগিল। এখনই সম্মতিসূচক একটা মাথা নাড়িলেই এই শাল কাঠের কড়িবাগ ও সেগুন কাঠের জানলা দরজা -সমেত পাকা ইমারতটির একেশ্বর প্রভু সে হইতে পারে, এই কথা চিন্তা করিয়া সে খুব একটা পরিতৃপ্তি বোধ করিল। জিজ্ঞাসা করিল, “সব তো হল, কিন্তু মেয়েটি?”
হরিমোহিনী তাড়াতাড়ি কহিলেন, “তার পিসির বাড়িতে হঠাৎ তার নিমন্ত্রণ হয়েছে তাই গেছে, দু-চার দিন দেরি হতে পারে।”
কৈলাস কহিল, “তা হলে দেখার কী হবে? আমার যে আবার একটা মকদ্দমা আছে, কালই যেতে হবে।”
হরিমোহিনী কহিলেন, “মকদ্দমা তোমার এখন থাক্। এখানকার কাজ সারা না হলে তুমি যেতে পারছ না।”
৫৪৩