বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:গৌড়লেখমালা (প্রথম স্তবক).djvu/১২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

লেখমালা।

পাল-নরপাল কর্ত্তৃক পুনঃস্থাপিত হইয়া থাকিবে।[] ইহা অনুমান মাত্র। তথাপি, ইহাকেও সংস্কার-যুগের নিদর্শন বলিয়া গ্রহণ করা যাইতে পারে। বৌদ্ধ-মতানুরক্ত পাল-নরপালগণের শাসন-সময়ে বিলুপ্ত-প্রায় পুরাতন বৌদ্ধ-কীর্ত্তিনিচয়ের সংস্কার-কার্য্য আরব্ধ হইবার সম্ভাবনার অভাব ছিল না। এই সকল প্রমাণ, তাহার অনুকুল প্রমাণ বলিয়া, গৃহীত হইতে পারে। কিন্তু ডাক্তার ভোগেল কর্ত্তৃক মুদ্রিত পাঠ প্রকাশিত হইবার পর, বেনারস-কলেজের সুযোগ্য অধ্যক্ষ [অধ্যাপক ভিনিস্] সোসাইটির পত্রিকায় “ঈশান, ঘণ্টাদি এবং গৌড়” এই কয়টি শব্দ যথাযথভাবে উদ্ধৃত হইয়াছে কিনা, তৎপ্রতি সংশয় প্রকাশ করিয়াছেন।[] এরূপ সংশয়ের কারণ কি, তাহা প্রতিভাত হয় না,—শব্দগুলি প্রস্তর-ফলকে ক্ষোদিত রহিয়াছে, তাহার অপলাপ-সাধনের সম্ভাবনা নাই। “কাশ্যাং” এবং “অকারয়ৎ”-শব্দে “ঈশান-চিত্রঘণ্টাদি-কীর্ত্তিরত্নশতানি” কাশীধামে নির্ম্মিত হইবার পরিচয় প্রাপ্ত হওয়া যায়। লিপিটি সারনাথে আবিষ্কৃত হইয়াছিল, সুতরাং তদুক্ত অন্যান্য কার্য্য সারনাথেই সম্পাদিত হইয়াছিল বলিয়া, সকলেই ধরিয়া লইয়াছেন। সে কার্য্যগুলি দুই শ্রেণীতে বিভক্ত হইবার যোগ্য। এক শ্রেণীর কার্য্য “পুনর্নবং”, আর এক শ্রেণীর কার্য্য “নবীনাং” বলিয়া দুইটি ভিন্ন ভিন্ন শব্দে উল্লিখিত রহিয়াছে। ইহাতে মনে হয়,—পূর্ব্ব-রচিত যে সকল কীর্ত্তি [সংস্কারাভাবে] জীর্ণ হইয়াছিল, তাহাকে “পুনর্নবং”; এবং যাহা কালক্রমে ধ্বংসপ্রাপ্ত হইয়াছিল, তাহাকে “নবীনাং” করা হইয়াছিল। এইরূপ ব্যাখ্যাই মূলানুগত বলিয়া প্রতিভাত হয়। এইরূপ অর্থে শিলা-লিপির উক্তিগুলি গ্রহণ করিলে, দেখিতে পাওয়া যায়,—“ধর্ম্মরাজিকা” এবং “সাঙ্গ-ধর্ম্মচক্র” এই দুইটিকে “পুনর্নবং” করা হইয়াছিল;—এবং “অষ্ট-মহাস্থান-শৈলগন্ধকূটীকে” “নবীনাং” করা হইয়াছিল। এক্ষণে ইহার কোনরূপ চিহ্ন বর্ত্তমান আছে কি না, অনুসন্ধান-সমিতি তাহারই অনুসন্ধান-কার্য্যে ব্যাপৃত হইয়াছিলেন। সারনাথের মূল-মন্দিরের দক্ষিণাংশে যে বৃহৎ স্তূপের ধ্বংসাবশেষ দেওয়ান জগৎ সিংহ কর্ত্তৃক স্থানান্তরিত হইয়াছিল, তাহা এক্ষণে “জগৎসিংহ-স্তূপ” নামে কথিত হইতেছে। তাহার ভূগর্ভ-নিহিত ইষ্টক-সন্নিবেশ-ব্যাপারে দেখিতে পাওয়া যাইতেছে,—একটি পুরাতন স্তূপের বহির্ভাগে আর একটি স্তূপাবরণ রচিত করিয়া, সংস্কার-কার্য্য সম্পন্ন করা হইয়াছিল। ইহার অনতিদূরে যে অশোক-স্তম্ভ আবিষ্কৃত

  1. The pillar, which was prostrate (?) in the seventh century, may have been set up again by one of the Buddhist Pála-kings in the eleventh or twelfth century—Prefatory Note to a Report on a Tour of Exploration, 1899. স্মিথ্ সমগ্র স্তম্ভটি ভূপতিত হইবার প্রমাণ কোথায় পাইয়াছেন, তাহার উল্লেখ করেন নাই। সুতরাং তাঁহার সিদ্ধান্ত যাহাই হউক, তাহার কারণটি বিচারসহ হয় নাই। পরলোকগত পূর্ণচন্দ্র মুখোপাধ্যায় এই অশোক-স্তম্ভের খনন-কার্য্যে ব্যাপৃত হইয়া দেখিতে পাইয়াছিলেন,—এই স্তম্ভের চারিদিকে একটি পুরাতন ও একটি অপেক্ষাকৃত নূতন ইষ্টক-প্রাচীর বর্ত্তমান আছে। শেষ প্রাচীরকে মুখোপাধ্যায় মহাশয় সংস্কার-কার্য্যের নিদর্শন বলিয়া গ্রহণ করিয়াছিলেন।
  2. Isāna, Ghantādi and Gauda, are happy readings, for which we are indebted to Professor Hultzsch. Personally I am unable to see these aksaras.—J. A. S. B. (New Series) Vol. II, No. 9, p. 447.

১০৬