(১২)
তিনি বাল্যকালে একবারমাত্র দর্শন করিয়াই, চতুর্ব্বিদ্যা-পয়োনিধি[১] পান করিয়া, তাহা আবার উদ্গীর্ণ করিতে পারিতেন বলিয়া, অগস্ত্য-প্রভাবকে[২] উপহাস করিতে পারিয়াছিলেন।
(১৩)
[এই মন্ত্রিবরের] বুদ্ধি-বলের উপাসনা করিয়া, গৌড়েশ্বর [দেবপালদেব][৩] উৎকল-কুল উৎকিলিত করিয়া, হূণ-গর্ব্ব খর্ব্বীকৃত করিয়া, এবং দ্রবিড়-গুর্জ্জর-নাথ-দর্প চূর্ণীকৃত করিয়া, দীর্ঘকাল পর্য্যন্ত সমুদ্র-মেখলাভরণা বসুন্ধরা উপভোগ করিতে সমর্থ হইয়াছিলেন।
(১৪)
তিনি যাচকগণকে যাচক মনে করিতেন না;—মনে করিতেন, তাঁহার দ্বারা অপহৃত-বিত্ত[৪] হইয়াই, তাহারা যাচক হইয়া পড়িয়াছে। তাঁহার আত্মা শত্রু-মিত্রে নির্ব্বিবেক ছিল। [কেবল] ভব-জলধি-জলে পতিত হইবার ভয় এবং লজ্জা [ভিন্ন] অন্য উদ্বেগ ছিল না। তিনি [সংযমাদি অভ্যাস করিয়া] বিষয়-বাসনা ক্ষালিত[৫] করিয়া, পরম-ধাম-চিন্তায় আনন্দ লাভ করিতেন।
- ↑ চতুর্থ শ্লোকের ন্যায় এই শ্লোকেও “বেদ”-অর্থে “বিদ্যা”-শব্দ ব্যবহৃত হইয়াছে। বিদ্যার সংখ্যা চতুর্দ্দশ, মতান্তরে অষ্টাদশ। এখানে সে অর্থ সূচিত হয় নাই। সুতরাং কেদারমিশ্র বেদজ্ঞ ছিলেন বলিয়াই বুঝিতে হইবে।
- ↑ অগস্ত্য [সমুদ্রপান-কালে] বালক ছিলেন না। তিনি একটিমাত্র সমুদ্র পান করিয়াছিলেন; কিন্তু তাহাকে আর উদ্গীর্ণ করিতে পারেন নাই;— ইহাই [ইঙ্গিতে] উপহাসের কারণ বলিয়া ধ্বনিত হইয়াছে। অগস্ত্য ঋষি বলিয়া, উপহাসের অযোগ্য; তাঁহাকে উপহাস করা শিষ্টাচার-বিরুদ্ধ। তজ্জন্যই “বাল এব” বলিয়া, কবি বুঝাইয়াছেন,—কেদারমিশ্র বালক বলিয়াই, এরূপ করিয়াছিলেন;—তাহা ক্ষমার্হ।
- ↑ এই শ্লোকোক্ত “গৌড়েশ্বরের” নাম উল্লিখিত হয় নাই। পূর্ব্বাপর-সামঞ্জস্য-রক্ষার্থ, তাঁহাকে “দেবপালদেব” বলিয়াই বুঝিতে হইবে। “চিরং”-শব্দেও তাহাই সূচিত হইয়াছে। দেবপালদেবের [মুঙ্গেরে আবিষ্কৃত] তাম্রশাসনে ৩৩ সংবৎ লিখিত থাকায়, তাঁহার দীর্ঘকাল রাজ্যভোগের প্রমাণ প্রাপ্ত হওয়া গিয়াছে। নারায়ণপালদেবের [ভাগলপুরে আবিষ্কৃত] তাম্রশাসনে [৬ শ্লোকে] দেবপালদেবের শাসন-সময়েই [তদীয় ভ্রাতা জয়পাল কর্ত্তৃক] উৎকল বিজিত হইবার পরিচয় প্রাপ্ত হওয়া যায়।
- ↑ “स्वयमपहृतवित्तान्” এই বিশেষণ-পদের ব্যাখ্যা করিবার জন্য অধ্যাপক কিল্হর্ণ চেষ্টা করেন নাই। তিনি কেবল লিখিয়া গিয়াছেন,—“He allowed suppliants to take freely away his riches.” উইল্কিন্স কিন্তু প্রকৃত তাৎপর্য্যের আভাস দিয়া লিখিয়া গিয়াছেন,—“He considered his own acquired wealth the property of the needy,” এই বিশেষণটি সমাজ-তত্ত্বের নিগূঢ় রহস্য উদ্ঘাটিত করিয়া, সেকালের বাঙ্গালার ধনাঢ্য ব্রাহ্মণের উচ্চ হৃদয়ের পরিচয় প্রদান করিতেছে।
- ↑ অধ্যাপক কিল্হর্ণের অনুবাদে “পরিমৃদিত”-শব্দের [বৈদ্যকশাস্ত্র-সম্মত] চূর্ণীকৃত [crushed] অর্থ গৃহীত হইয়াছে; এবং তজ্জন্যই শ্লোকার্থ বিকশিত হয় নাই। উপনিষৎ ও দর্শনাদিতে ব্যবহৃত “মৃদিত-কষায়”-শব্দ সুপরিচিত। ছান্দোগ্যোপনিষদে দেখিতে পাওয়া যায়;—“आहार-शुद्धौ सत्वशुद्धिः, सत्वशुद्धौ ध्रुवा स्मृतिः, स्मृतिलभ्ये सर्व्वग्रन्यीनां विप्रमोक्ष स्तस्मात् मृदित-कषायाय तमसः दर्शयति।” ইহার ব্যাখ্যায় ভাষ্যকার লিখিয়া গিয়াছেন,—“রাগ-দ্বেষাদি দোষের নাম কষায়; জ্ঞানবৈরাগ্যাভ্যাসরূপ ক্ষার-জলে তাহা [মৃদিত] ক্ষালিত হইয়া থাকে।” যথা,—“कषायो राग-द्वेषादि दोषः [तस्य रञ्जन-रूपत्वात्], ज्ञानवैराग्याभ्यासरूप क्षारेण क्षालितो मृदितो विनाशितः” इत्यादि।
৮১