পাতা:গ্রহ-নক্ষত্র.pdf/২১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
ধূমকেতু
১৬৯

বুঝিতে পার নাই। আমাদের গ্রহ-উপগ্রহদের চেয়ে অনেক ছোট যে-সব জড়পিণ্ড সূর্য্যের রাজ্যের বাহিরে ঘুরিয়া বেড়াইতেছে, আমরা তাহাদিগকেই অতিথি বলিতেছি। অতিথি বা পথিকের খবর যেমন আমরা জানি না, ইহাদেরও খবর আমরা জানি না। ইহারা সূর্য্যের জগতের জিনিস নয়। নেপ্‌চুনের ভ্রমণ-পথের বাহিরে সমস্ত আকাশের যেখানে-সেখানে নিজেদের খেয়াল মত ইহারা ঘুরিয়া বেড়ায়। আকারে বড় নয়, তার উপরে সূর্য্য বা নক্ষত্রদের মত আলোও তাদের নাই, এজন্য দূরবীণ দিয়াও তাহাদের খোঁজ করা যায় না। যখন পথিকের বেশে অতিথি হইয়া সূর্য্যের রাজ্যে প্রবেশ করে, আমরা তখনি ইহাদিগকে সূর্য্যের আলোতে দেখিতে পাই। এই অজ্ঞাতকুলশীল জড়পিণ্ডেরাই আমাদের কাছে, ধূমকেতুর আকারে দেখা দেয়।

 বুঝিতে পারিলে কি? তাহা হইলে দেখ,—আমাদের পৃথিবী ও অন্যান্য গ্রহদের সহিত সূর্য্যের যেমন আত্মীয়তা আছে, ধূমকেতুদের সহিত মোটেই তাহা নাই। ইহারা সূর্য্য-জগতের অতিথিমাত্র। কোনো অজানা দেশ হইতে হাঁপাইতে হাঁপাইতে ছুটিয়া আসিয়া ইহাদের অনেকেই কেবল কয়েকদিনের জন্য এই জগতে আসে। কিন্তু সূর্য্য ছাড়িবার পাত্র নয়; একবার এরাজ্যে প্রবেশ করিলে কেহই তাহার হাত হইতে সহজে মুক্তি পায় না। অতিথি ধূমকেতুরাও মুক্তি পায় না। সূর্য্য জগতে পা ফেলিবা মাত্র সূর্য্য তাহাদিগকে জোরে টানিতে থাকে। কাজেই তাহারা ছুটিয়া সূর্য্যের দিকে চলে এবং শীঘ্র শীঘ্র একবার মাত্র সূর্য্য-প্রদক্ষিণ করিয়া এই রাজ্য হইতে চিরদিনের জন্য বিদায় গ্রহণ করে।

 আমরা যত ধূমকেতু দেখিতে পাই, তাহাদের অনেকেই এই রকমের অতিথি-জ্যোতিষ্ক। ইহারা আমাদিগকে খবর দিয়া আসে না,—কিন্তু আসিলেই সূর্য্য জানিতে পারে এবং তাহাদিগকে টানিয়া নিজের চারিদিকে একবার কলুর বলদের মত ঘুরপাক্ খাওয়ায়।