পাতা:গ্রীক ও হিন্দু - প্রফুল্লচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

:৪৭৬ m গ্রীক ও হিন্দু। বাহ ও অন্তঃপদার্থের যে সুসমাবেশভাব, তাহার মাধুর্য্য-সন্দর্শনে হৃদয় উদ্বেলিত ও চিত্ত বিকম্পিত হইলে, সেই মাধুৰ্য্য যখন বাক্য দ্বারা ব্যক্ত হয়, তাহা কাব্য। যে বিষয়ে কাব্য, সেই বিষয়ের উহা অাদর্শ আলেখ্য স্বরূপ। মাধুর্য্য অর্থে যে কেবল বাসন্ত দক্ষিণানিলের স্নিগ্ধস্পর্শ বা তথাবিধ বস্তু, তাহা নহে ; তমসাচ্ছন্ন নিশি, নিবিড় ঘনঘটা, বিদ্যুৎ, বজাগ্নি বা কোন বীভৎস বস্তু, সকলেতেই এই মাধুৰ্য্য বিদ্যমান আছে। এ কথা শুনিয়া বাঞ্ছারামের ন্যায় পণ্ডিত হয় ত বলিবে যে, মধু হইতে যখন মাধুর্য্য, তখন বীভৎস বা হিংসা প্রভৃতি ব্যাপারে, ভীষণ দৃপ্ত বা কদৰ্য্য ঘটনাবলীর মধ্যে, মাধুর্য্যের সম্ভবত কোথায় ? কিন্তু বাঞ্ছারাম ! জানিবে যে, চিত্ত যখন যে রসের আকাজক্ষায় আকাঙ্ক্ষিত হয়, সেই আকাঙ্ক্ষাকে যাহা যাহা পূরণ করিয়া তৎস্থানে তদনুগামী অবশু্যম্ভাবী তৃপ্তির উৎপাদন করিয়া থাকে, তাহাকেই সেই আকাজিত বিষয়ের মাধুৰ্য্য বলা যায়। যদি ইংরেজী নাটককারের ইয়াগোর খলচরিত্রপাঠে, তোমার মন কখন খলচরিত্রসম্বন্ধী আকাঙ্ক্ষণ পরিতৃপ্ত হওয়ায় তৃপ্তি বোধ করিয়া থাকে, তাহা হইলে নিশ্চয় যে সে দুরন্ত খলচরিত্রও মাধুৰ্য্যশূন্ত নহে ; বরং তথায় খলচরিত্রের পূর্ণ প্রতিভাসে, মাধুৰ্য্যগুণ সাধারণ পরিমাণের অতীত । চিত্তের বস্তুবোধ যখন বহির্জগৎসংযোগে প্রতিভাসিত হইয়া স্বীয় স্বরূপত প্রকাশে সমর্থ হয়, তখনই মাধুৰ্য্যের যথার্থত: সঞ্চার হইয়া থাকে। এই প্রতিভাসপূর্ণ স্বরূপতাভাব যত পরিস্ফুট ও যত পূর্ণভাবে প্রকটত হইতে থাকে, বলা বাহুল্য যে, তথায় মাধুৰ্য্যও সেই পরিমাণে পরিচ্ছিন্ন, পূর্ণ এবং আদর্শস্থলীয় হয়। চিন্তা এবং কল্পনাসাপেক্ষ বস্তুবোধ, যেরূপ যেরূপ পন্থী সকল অবলম্বনে বহির্জগৎ সহ সংযোজিত হয়, এবং চিত্ত যখন যে ভাবে আপ্ল ত হইয়৷ তদীয় প্রতিভাসিত স্বরূপুত৷