পাতা:ঘরে-বাইরে - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (২০১৯).pdf/১৬২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৫৮
ঘরে-বাইরে

জন্যে নয়, আমাদের সকলের জন্যে। সন্দীপবাবু বলেন, সংসারে যারা ঈশ্বর, ঐশ্বর্যের সম্মােহনই হচ্ছে তাদের সবচেয়ে বড়াে অস্ত্র। দারিদ্র্যব্রত গ্রহণ করা তাদের পক্ষে দুঃখগ্রহণ করা নয়, সে হচ্ছে আত্মঘাত।

 এমন সময় নিঃশব্দে সন্দীপ হঠাৎ ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়ল। আমি তাড়াতাড়ি আমার গয়নার বাক্সর ওপর শাল চাপা দিলুম। সন্দীপ বাঁকা সুরে জিজ্ঞাসা করলে, অমূল্যর সঙ্গে তােমার বিশেষ কথার পালা এখনাে ফুরােয় নি বুঝি?

 অমূল্য একটু লজ্জিত হয়ে বললে, না, আমাদের কথা হয়ে গেছে। বিশেষ কিছু না।

 আমি বললুম, না অমূল্য, এখনাে হয় নি।

 সন্দীপ বললে, তা হলে দ্বিতীয়বার সন্দীপের প্রস্থান?

 আমি বললুম, হাঁ।

 তা হলে সন্দীপকুমারের পুনঃপ্রবেশ—

 সে আজ নয়। আমার সময় হবে না।

 সন্দীপের চোখদুটো জ্বলে উঠল। বললে, কেবল বিশেষ কাজেরই সময় আছে, আর সময় নষ্ট করবার সময় নেই?

 ঈর্ষা! প্রবল যেখানে দুর্বল সেখানে অবলা আপনার জয়ডঙ্কা না বাজিয়ে থাকতে পারে কি? আমি তাই খুব দৃঢ় স্বরেই বললুম, না, আমার সময় নেই।

 সন্দীপ মুখ কালি করে চলে গেল। অমূল্য কিছু উদ্‌বিগ্ন হয়ে বললে, রানীদিদি, সন্দীপবাবু বিরক্ত হয়েছেন।

 আমি তেজের সঙ্গে বললুম, বিরক্ত হবার ওঁর কারণও নেই, অধিকারও নেই। একটি কথা তােমাকে বলে রাখি অমূল্য, আমার এই গয়না-বিক্রির কথা তুমি প্রাণান্তেও সন্দীপবাবুকে বলতে পারবে না।

 অমূল্য বললে, না, বলব না।

 তা হলে আর দেরি কোরাে না, আজ রাত্রের গাড়িতেই তুমি চলে যাও।

 এই বলে অমূল্যর সঙ্গে সঙ্গে আমি ঘর থেকে বেরিয়ে এলুম। বাইরে এসে দেখি, বারান্দায় সন্দীপ দাঁড়িয়ে আছে। বুঝলুম, এখনই সে অমূল্যকে ধরবে। সেইটে বাঁচাবার জন্যে তাঁকে ডাকতে হল, সন্দীপবাবু, কী বলতে চাচ্ছিলেন?

 আমার কথা তাে বিশেষ কথা নয়, কেবল বাজে কথা, সময় যখন নেই তখন—