পরিশিষ্ট।
আমি শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার উপক্রমণিকায় দেখাইবার চেষ্টা করিয়াছি যে হিন্দু শাস্ত্র মাত্রই দ্ব্যর্থবোধক অর্থাৎ জ্ঞানীর পক্ষে অন্তর্লক্ষ্য ও অজ্ঞানীর পক্ষে বহির্লক্ষ্য প্রকাশক। মার্কণ্ডেয় পুরাণান্তর্গত চণ্ডীও রূপকাবৃত মহাশাস্ত্র। ইহা পাঠ করিয়া জ্ঞানী ও অজ্ঞানী উভয়েই ধর্ম্ম অর্থ কামমোক্ষ চতুর্বর্গ লাভ করিতে পারেন। অন্তর্লক্ষ্য গীতাতে যেমন শরীরস্থ প্রবৃত্তি ও নিবৃত্তির যুদ্ধ বুঝায়, সেরূপ চণ্ডীতে দেবতা বা পূণ্যশক্তির সহিত অসুর বা পাপশক্তির মহাসংগ্রাম বুঝাইয়াছে। এই দেবাসুর সংগ্রামে কখন ও বা দেবতা জয়ী কখন বা অসুর জয়ী হইয়া থাকে। যখন দেবতা পরাজিত ও অসুর জয়ী হন তখন জগতে পূণ্যের স্থান পাপ শক্তির অধিকৃত হয়। দেবগণ হীন শক্তি ও পরাজিত হইলে পুণ্য শক্তি রক্ষার জন্ত মহাশক্তির আবির্ভাব হয়। সে মহাশক্তি কি? একবার দেখা থাক।
সমগ্র জগৎ দুইটী পদার্থের দ্বারা সৃজিত; একটী ব্যোম বা আকাশ, অপরটী প্রাণ। আকাশ সর্ব্বব্যাপী সর্ব্বানুস্যুত সত্ত্বা যাহা হইতে জাগতিক সূক্ষ্ম স্থূল বস্তু উৎপন্ন হইয়াছে। সৃষ্টির আদিতে একমাত্র আকাশই থাকে এবং কল্পান্তে কঠিন তরল ও বাষ্পীয় সকল পদার্থই আকাশে লয় প্রাপ্ত হয়। দ্বিতীয়টী প্রাণ। এই প্রাণই জগৎ উৎপত্তির কারণভূতা অনন্তরূপা সর্ব্বব্যাপিনী মহাশক্তি যথা “অপরেরমিত ত্বন্যাং প্রকৃতিং বিদ্ধিমে পুরাং। জীব ভূতাং মহাবাহো ময়েদং ধার্য্যতে জগৎ”॥