পাতা:চতুরঙ্গ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩২
চতুরঙ্গ

 “উপায় আছে। আমি ননিকে বিবাহ করিব।”

 “বিবাহ করিবে?”

 “হাঁ, সিভিল বিবাহের আইনমতে।”

 জগমোহন শচীশকে বুকে চাপিয়া ধরিলেন। তাঁর চোখ দিয়া ঝর‍্ঝর্ করিয়া জল পড়িতে লাগিল। এমন অশ্রুপাত তাঁর বয়সে আর কখনো তিনি করেন নাই।

বাড়ি-বিভাগের পর হরিমোহন একদিনও জগমোহনকে দেখিতে আসেন নাই। সেদিন উস্কোখুস্কো আলুথালু হইয়া আসিয়া উপস্থিত। বলিলেন, “দাদা, এ কী সর্বনাশের কথা শুনিতেছি?”

 জগমোহন কহিলেন, “সর্বনাশের কথাই ছিল, এখন তাহা হইতে রক্ষার উপায় হইতেছে।”

 “দাদা, শচীশ তোমার ছেলের মতো— তার সঙ্গে ঐ পতিতা মেয়ের তুমি বিবাহ দিবে?”

 “শচীশকে আমি ছেলের মতো করিয়াই মানুষ করিয়াছি— আজ তা আমার সার্থক হইল, সে আমাদের মুখ উজ্জ্বল করিয়াছে।”

 “দাদা, আমি তোমার কাছে হার মানিতেছি— আমার আয়ের অর্ধ অংশ আমি তোমার নামে লিখিয়া দিতেছি— আমার উপরে এমন ভয়ানক করিয়া শোধ তুলিয়ো না।”

 জগমোহন চৌকি ছাড়িয়া উঠিয়া দাঁড়াইয়া বলিলেন, “বটে!