পাতা:চতুষ্কোণ - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

AYO চতুষ্কোণ বিদ্রোহের মত দাড়াইয়া থাকে, তার চোখ দু'টি কেবল জলে বোঝাই হইয়া যায়। রাজকুমার অন্যমনে রিনির কথা ভাবিতেছিল, অবাক হইয়া সে কালীর দিকে চাহিয়া থাকে। এতটুকু মেয়ের মধ্যে ভাবাবেগের এই তীব্ৰতা সে হঠাৎ ঠিকমত ধারণা করিয়া উঠিতে 9ts কি উদ্দেশ্যে এবং কেন কিছু না ভাবিয়াই, সম্ভবতঃ আহত সকাতর। শিশুকে আদর করার স্বাভাবিক প্রেরণার বশে, কালীর দিকে সে হাত বাড়াইয়া দেয়। কালীর নাগাল কিন্তু সে পায় না, দু'হাতে তাকে সজোরে ঠেলিয়া দিয়া কালী ছুটিয়া পলাইয়া যায়। সমস্ত দুপুর রাজকুমার বিষগ্ন হইয়া থাকে। বাহিরে কড়া রোদ, ঘরে উজ্জল আলো, রাজকুমারের মনে যেন সন্ধ্যার ছায়া, অমাবস্যা রাত্রির ছদ্মবেশী আগামী অন্ধকার । একটা কষ্ট বোধও যেন সমস্ত শরীরে ছড়াইয়া পড়িয়াছে, রাত্রি জাগরণের পর যেমন হয়। রাত্রে সে তো কাল ঘুমাইয়াছিল, সমস্ত রাত ঘুমাইয়া ঘুমাইয়া স্বপ্ন দেখিয়াছে । বিকালে রাজকুমার রিনিদের বাড়ি গেল। দারোয়ানের কাছে খবর পাওয়া গেল স্যার কে. এল. বাড়িতেই আছেন, সারাদিন একবারও তিনি বাহিরে যান নাই। রিনির অসুখ, দু’বার ডাক্তার আসিয়াছিল । অসুখ ? নীচের হলে গিয়া দাড়াইতে রিনির ভাঙ্গা ভাঙ্গা গানের সুর রাজকুমারের কানে ভাসিয়া আসে। তারপর হঠাৎ এত জোরে সে বাড়ির দাসীকে ডাক দেয় যে তার সেই শেষ পর্দায় তোলা তীক্ষ কণ্ঠস্বরা যেন ঘরের দেয়ালে, ঘরের বাতাসে, রাজকুমারের গায়ে আঁচড় কাটিয়া যায়। ডাক্তারকে দু’বার আসিতে হইয়াছিল রিনির এমন অসুখ । আগাগোড়া সবটাই কি রিনির তামাশা ? কেবল তার সঙ্গে নয়, বাড়ির লোকের সঙ্গেও সে কি খেলা করিতেছে-তার বিকারগ্ৰস্তু মনের কোন এক আকস্মিক ও দুৰ্বোধ্য প্রেরণার বশে ?