গেল। লক্ষ লোক তখন চন্দ্রের দিকে চাহিয়া জয়ধ্বনি করিতে লাগিল। রজনীর পর রজনী তাহারা কতবার চন্দ্রদেবকে আকাশ পথে শীতল কিরণ ধারা বর্ষণ করিতে দেখিয়াছে— কিন্তু তখন যেমন দেখিল, মনে হইল যেন তেমন আর কখনো দেখে নাই। সেদিন চন্দ্রের রূপ যেমন মধুর লাগিল—চন্দ্রের কর যেমন সুন্দর ও শীতল লাগিল, মনে হইল যেন তেমন আর কখনো লাগে নাই! চন্দ্র সেদিন পরমাত্মীয়েরও অধিক বলিয়। বোধ হইল—চাহিতে চাহিতে চক্ষে জালা ধরিলেও নয়ন ফিরাইতে ইচ্ছা হইল না! সেই লক্ষাধিক লোক সহসা যেন এক মন্ত্রবলে সঞ্জীবিত হইয়া আমেরিকার জাতীয় সঙ্গীত গাহিতে লাগিল। সে গীতিধ্বনি এক একবার ষ্টোর্নিহিলের নিকট হইতে ক্রমে দূরে সরিয়া যাইতে লাগিল— আবার পরমুহূর্ত্তেই স্তরে স্তরে ভাসিতে ভাসিতে নিকটবর্ত্তী হইল।
ফরাসী আর্দ্দান্, কাপ্তান নিকল্ ও বার্বিকেন্ হাসিতে হাসিতে কামানের নিকটে আসিয়া দাঁড়াইলেন। রেলে উঠিয়া দূরদেশে ভ্রমণে যাইবার সময় মানুষের মুখে যতটুকু চাঞ্চল্য প্রকাশ পায়, তাঁহাদের নয়নে বদনে কেহ সেটুকুও লক্ষ্য করিতে পারিল না। ক্রমে রাত্রি দশটা বাজিল। তাঁহারা গোলকের মধ্যে প্রবেশ করিবার জন্য প্রস্তুত হইলেন। সাশ্রুনয়নে ম্যাট্সন্ কহিলেন—
“বার্বিকেন্, এখনো সময় আছে— আমিও আসি।”
“না ম্যাট্সন্, তা’ হ’বে না। আমরা আমেরিকার অগ্রদূত হ’য়ে চন্দ্রলোকে যাই। কামান ত’ রৈলই, দরকার হ’লে তোমরা আমাদের কাছে দেশের সংবাদ পাঠাতে পার্বে।”