পাতা:চন্দ্রলোকে যাত্রা - রাজেন্দ্রলাল আচার্য.pdf/৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যাত্রা

হইলেন। কে কাহার গায়ে পড়িল—কে কাহাকে মথিত করিল— প্রাণভয়ে পলায়ন করিতে যাইয়া কে আছাড় খাইয়া নিজের হস্ত-পদ ভাঙ্গিল কে তখন তাহার সংবাদ লয়! ভীষণ চীৎকারে ও দারুণ আর্তনাদে সেই কানন-ভূমি প্রেত-ভুমি হইয়া উঠিল। যাহারা কামানের অপেক্ষাকৃত নিকটে ছিল, তাহারা বন্দুকের গুলির মত দূরে ছিট‍্কাইয়া পড়িল!

 বায়ুমণ্ডলে তখন এমন ভীষণ কম্পন উপস্থিত হইয়াছিল যে অবিলম্বে ঘোর ঝড় উঠিল। সেই ঝড়ে পটাবাস উড়িল—গৃহ পড়িল—কাননে বৃক্ষ ভাঙ্গিয়া নির্মূল হইয়া গেল! টম্পার পথে ট্রেণ রেলপথ হইতে গড়াইয়া গড়াইয়া প্রান্তর মধ্যে পতিত হইল! বন্দরে যে সকল জাহাজ বাঁধা ছিল, তাহাদের শিকল ছিঁড়িল—নোঙ্গর খসিল— ছাদ উড়িল—মাস্তুল ভাঙ্গিল। তাহারা বন্ধনমুক্ত হইয়া এ উহাকে প্রবল বেগে আঘাত করিতে লাগিল— কেহ বা তীরে আসিয়া ধাক্কা খাইয়া পড়িল— কতক বা ভাসিয়া গেল! এই প্রবল ঝটিকা ঘূর্ণিবায়ুর আকার ধারণ করিয়া আট‍্লাণ্টিক মহাসাগরের উপর দিয়া হাহারবে ছুটিতে লাগিল! যে সকল জাহাজ সেই দৈত্যের পথে পড়িল সে সমস্তই মুহূর্ত্তে ডুবিয়া গেল!

 দর্শকদিগের দুর্ভাগ্য! নিমেষে সেই পরিচ্ছন্ন আকাশ মেঘলিপ্ত হইয়া উঠিল। সে মেঘের আবরণ ভেদ করিয়া কাহারো দৃষ্টি আকাশ পথে চলিল না। চন্দ্র, তারকা, সমস্তই সে মেঘে ঢাকিয়া দিল। কামানের গোলার কি যে হইল, তাহা কেহ দেখিতে পাইল না! হাতের দূরবীক্ষণ হাতেই রহিয়া গেল।

৭৩