পাতা:চন্দ্রলোকে যাত্রা - রাজেন্দ্রলাল আচার্য.pdf/৮১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
চন্দ্রলোকে যাত্রা

দশটা বাজিয়া ছয়চল্লিশ মিনিট হইল। আর চল্লিশ সেকেণ্ড! মার্চিসনের হৃদয়, কাঁপিয়া উঠিল! তিনি অপেক্ষাকৃত উচ্চ-কণ্ঠে সেকেণ্ড গণনা করিতে লাগিলেন। দশ—পনেরো—কুড়ি—পঁচিশ—ত্রিশ—! আর দশ সেকেণ্ড মাত্র! সেই চন্দ্রালোকে দর্শকদিগের মধ্যে যাহারা ঘড়ি দেখিতেছিল, তাহারা দারুণ উৎকণ্ঠায় চীৎকার করিয়া উঠিল। পর্ব্বত শিখরে থাকিয়া মার্চিসন্ আবার গণনা করিতে লাগিলেন,—পঁয়ত্রিশ—ছত্রিশ—সাঁইত্রিশ—আটত্রিশ—! মার্চিসনের দক্ষিণ কর বৈদ্যুতিক যন্ত্রের চাবির দিকে প্রসারিত হইল। তাঁহার করাঙ্গুলী একবার কাঁপিয়া উঠিল— তাঁহার নিশ্বাস একবার রুদ্ধ হইয়া আসিল। তিনি আবার গণিলেন—ঊনচল্লিশ—চ—ল্লি—শ!

 তাহার পর কি যে ঘটিল, তাহা বর্ণনা করা অসম্ভব! শত-সহস্র বজ্র এক সঙ্গে ধ্বনিত হইলে যে শব্দ হয়—কামানের গর্জ্জনের তুলনায় তাহা কিছুই নয় বলিয়া বোধ হইল! অকস্মাৎ যেন একটা বিশাল আগ্নেয়গিরি যোজন-ব্যাপী অগ্নি-শিখা ঊর্দ্ধে উৎক্ষিপ্ত করিল। সেই শিখা মুহূর্ত্তের জন্য শুধু ষ্টোনিহিল নয়, সমগ্র ফ্লোরিডা প্রদেশকে আলোকোদ্ভাসিত করিয়া দিল। ষ্টোনিহল এবং নিকটবর্ত্তী স্থান সমূহের অধিবাসীরা দেখিল, সহসা যেন সূর্য্যোদয় হইয়াছে! পরে জানা গিয়াছিল যে সমুদ্রগামী কোন কোন জাহাজের অধ্যক্ষ সহসা আকাশ পথে এই অভূত-পূর্ব্ব আলোক শিখা দেখিয়া স্তম্ভিত হইয়াছিলেন।

 গর্জ্জনের সঙ্গে সঙ্গেই দারুণ কম্পন উপস্থিত হইল—সে কম্পনে ষ্টোনিহিল কাঁপিল, আর্দ্দান্ নগর কাঁপিল-টম্পা কাঁপিল—এমন কি সমগ্র ফ্লোরিডা পর্য্যন্ত কাঁপিয়া উঠিল। দর্শকগণ অনেকেই ধরাশায়ী

৭২