পাতা:চারিত্রপূজা (১৯৩০) - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

88 চারিত্রিপূজা সদগুণের ফলভোগী হইয়াছে, সে যদি স্ত্রীজাতির পক্ষপাতী না হয়, তাহা হইলে, তাহার তুল্য কৃতক্স পামর ভূমণ্ডলে নাই ।” স্ত্রীজাতির স্নেহ-দয়া-সৌজন্য হইতে বঞ্চিত হইয়াছে, আমাদের মধ্যে এমন হতভাগ্য কয়জন আছে ? কিন্তু ক্ষুদ্র হৃদয়ের স্বভাব এই যে, সে যে পরিমাণে অযাচিত উপকার প্রাপ্ত হয়, সেই পরিমাণে অকৃতজ্ঞ হইয়া উঠে। যাহা-কিছু সহজেই পায়, তাহাই আপনার প্রাপ্য বলিয়া জানে ; নিজের দিক হইতে যে কিছুমাত্র দেয় আছে, তাহা সহজেই ভুলিয়া যায়। আমরাও সংসারে মাঝে মাঝে রাইমণিকে দেখিতে পাই -এবং যখন, সেবা করিতে আসেন, তখন তাহার সমস্ত যত্ন এবং প্রীতি অবহেলাভরে গ্রহণ করিয়া তাহাকে পরম অনুগ্ৰহ করিয়া থাকি ;-তিনি যখন চরণপূজা করিতে আসেন, তখন আপন পঙ্ককলঙ্কিত পদযুগল অসঙ্কোচে প্রসারিত করিয়া দিয়া অত্যন্ত নির্লজ্জ স্পৰ্দ্ধাভরে সত্যসত্যই আপনাদিগকে নরদেবতারূপে নারীসম্প্রদায়ের পূজাগ্রহণের অধিকারী বলিয়া জ্ঞান করি। কিন্তু এই সকল সেবক-পূজক অবলগণের দুঃখমোচন এবং সুখস্বাস্থ্যবিধানে আমাদের মতো মৰ্ত্ত্যদেবগণের সুমহৎ ঔদাসীন্য কিছুতেই দূর হয় না ; তাহার কারণ, নারীদের কৃত সেবা কেবল আমরা আমাদের সাংসারিক স্বাৰ্থ সুখের সহিত জড়িত করিয়া দেখি, তাহা আমাদের হৃদয়ের মধ্যে প্ৰবেশ করিয়া কৃতজ্ঞতা উদ্রেক করিবার অবকাশ | || বিদ্যাসাগর প্রথমত বেথুন সাহেবের সহায়তা করিয়া বঙ্গদেশে স্ত্রীশিক্ষার সূচনা ও বিস্তার করিয়া দেন। অবশেষে যখন তিনি বাল্যবিধবাদের দুঃখে ব্যথিত হইয়া বিধবাবিবাহপ্রচলনের চেষ্টা করেন, তখন দেশের মধ্যে সংস্কৃতশ্লোক ও বাংলা গালি মিশ্রিত এক তুমুল কলকোলাহল উখিত হইল। সেই মুষলধারে শাস্ত্র ও গালিবর্ষণের মধ্যে এই