পাতা:চারিত্রপূজা (১৯৩০) - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

r8: চারিত্রিপূজা সম্মানকেও পিতৃদেব পরিহার করিয়াছিলেন। ক্ষুরধার নিশিত দুরতিক্রম্য পথেই তিনি নিৰ্ভয়ে পদনিক্ষেপ করিলেন । লোকসমাজের আনুগত্য করিতে গিয়া তিনি আত্মবিদ্রোহী, আত্মঘাতী হইলেন না । ধনিগৃহে যাহাদের জন্ম, পৈতৃককাল হইতেই সমাজের নিকট সম্মানলাভে যাহারা অভ্যস্ত, সমাজপ্রচলিত সংস্কারের নিবিড়বৃহ ভেদ করিয়া নিজের অন্তৰ্লব্ধ সত্যের পতাকাকে শত্রুমিত্রের ধিক্কার, লাঞ্ছনা ও প্ৰতিকুলতার বিরুদ্ধে অবিচলিত দৃঢ়মুষ্টিতে ধারণ করিয়া রাখা তাহদের পক্ষে কোনোমতেই সহজ নহে-বিশেষত বৈষয়িক সঙ্কটের সময় সকলের আনুকূল্য যখন অত্যাবশ্যক হইয়া উঠে, তখন তাহা যে কিরূপ কঠিন, সে কথা সহজেই অনুমান করা যাইতে পারে। সেই তরুণ বয়সে, বৈষয়িক দুৰ্যোগের দিনে, সন্ত্রান্তসমাজে তাহার যে বংশগত প্ৰভূত প্ৰতিপত্তি ছিল, তাহার প্রতি দৃকপাত না করিয়া, পিতৃদেব ভারতবর্ষের ঋষিবন্দিত চিরন্তন ব্ৰহ্মের, সেই অপ্রতিম দেবাদিদেবের আধ্যাত্মিক পূজা প্ৰতিকূল সমাজের নিকট মুক্তকণ্ঠে ঘোষণা করিলেন। তাহার পরে তঁহার জীবনে আর এক গুরুতর সংগ্রামের দিন উপস্থিত হইল। সকলেই জানেন, বৈচিত্ৰ্যই জগতে ঐক্যকে প্ৰমাণ করেবৈচিত্ৰ্য যতই সুনির্দিষ্ট হয়, ঐক্য ততই সুস্পষ্ট হইয়া উঠে। ধৰ্ম্মও সেইরূপ নানাসমাজের ইতিহাসকে আশ্রয় করিয়া নানা বিভিন্নকণ্ঠে নানা বিচিত্র আকারে এক নিত্যসত্যকে চারিদিক হইতে সপ্ৰমাণ করিতে চেষ্টা করিতেছে । ভারতবর্ষ বিশেষ সাধনায় বিশেষভাবে যাহা লাভ করিয়াছে, তাহার ভারতবর্ষীয় আকার বিলুপ্ত করিয়া, তাহাকে ভারতবর্ষের ইতিহাস হইতে উৎপাটিত করিয়া, তাহাকে অন্যদেশীয় আকৃতিপ্ৰকৃতির সহিত মিশ্রিত করিয়া দিবার চেষ্টা করিলে জগতের ঐক্যমূলক বৈচিত্র্যের ধৰ্ম্মকে লঙ্ঘন করা হয়। প্ৰত্যেক লোক যখন আপনার প্ৰকৃতি অনুসারে পরিপূর্ণ উৎকর্ষ লাভ করে, তখনই সে মনুষ্যত্বলাভ