পাতা:চার অধ্যায় - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

দেখা দেয়। বর্তমান সেই নীচ পদার্থ যার ছােটো মুখে বড়ো কথা। ভয় দেখায় সে মুখােশ প’রে—যেন আমরা মুহূর্তের কোলে নাচানাে শিশু। মৃত্যু মুখােশখানা টান মেরে ফেলে দেয়। মৃত্যু অত্যুক্তি করে না। যা অত্যন্ত করে চেয়েছি তার গায়ে মােটা অঙ্কের দাম লেখা ছিল বর্তমানের ফাঁকির কলমে, যা অত্যন্ত করে হারিয়েছি তার গায়ে দুদিনের কালি লেবেল মেরে লিখেছে অপরিসীম দুঃখ। মিথ্যে কথা। জীবনটা জালিয়াত, সে অনন্তকালের হস্তাক্ষর জাল করে চালাতে চায়। মৃত্যু এসে হাসে, বঞ্চনার দলিলটা লােপ করে দেয়। সে হাসি নিষ্ঠুর হাসি নয়, বিদ্রূপের হাসি নয়, শিবের হাসির মতাে সে শান্ত সুন্দর হাসি, মােহ-রাত্রির অবসানে। এলী, রাত্রে একলা বসে কখনাে মৃত্যুর স্নিগ্ধ সুগভীর মুক্তি অনুভব করেছ, যার মধ্যে চিরকালের ক্ষমা?”

 “তােমার মতাে বড়ো করে দেখবার শক্তি আমার নেই অন্তু,—তবু তােমাদের কথা মনে করে উদ্‌বেগে যখন অভিভূত হতে পড়ে মন,—তখন এই কথাটা খুব নিশ্চিত করে অনুভব করতে চেষ্টা করি যে মরা সহজ।”

 “ভীরু, মৃত্যুকে পালাবার পথ বলে মনে করছ কেন। মৃত্যু সবচেয়ে নিশ্চিত—জীবনের সব গতিস্রোতের চরম সমুদ্র, সব সত্যমিথ্যা ভালােমন্দর নিঃশেষ সমন্বয় তার

১১৫