পাতা:চিঠিপত্র (অষ্টম খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

এই "যথার্থ খাটি ভাবুকের প্রাণসঞ্চারক সঙ্গ” রবীন্দ্রনাথ (১৮৬১-১৯৪১ ) প্রথমযৌবনে বিশেষভাবে পাইয়াছেন প্রিয়নাথ সেনের (১৮৫৪-১৯১৬ ) মধ্যে। পূর্বোন্ধত চিঠি লিখিবার কয়েক দিন পূর্বে ইন্দিরা দেবীকে আরএকখানি চিঠিতে তিনি লিথিয়াছেন— ‘২ অগস্ট, ১৮৯৪ । প্রিায়] বাবুর সঙ্গে দেখা করে এলে আমার একটা মহৎ উপকার এই হয় যে, সাহিত্যটাকে পৃথিবীর মানব-ইতিহাসের একটা মস্ত জিনিষ বলে প্রত্যক্ষ দেখতে পাই এবং তার সঙ্গে এই ক্ষুদ্র ব্যক্তির ক্ষুদ্র জীবনের ষে অনেকখানি যোগ আছে তা অনুভব করতে পারি । তখন আপনার জীবনটাকে রক্ষা করবার এবং আপনার কাজগুলো সম্পন্ন করবার যোগ্য বলে মনে হয়— তখন আমি কল্পনায় আপনার ভবিষ্যৎ জীবনের একটা অপূর্ব ছবি দেখতে পাই। দেখি যেন আমার দৈনিক জীবনের সমস্ত ঘটনা সমস্ত শোকদুঃখের মধ্যস্থলে একটি অত্যন্ত নির্জন নিস্তব্ধ জায়গা আছে, সেইখানে আমি নিমগ্নভাবে বসে সমস্ত বিস্তৃত হয়ে আপনার স্বষ্টিকার্যে নিযুক্ত আছি— মুখে আছি । সমস্ত বড়ো চিন্তার মধ্যেই একটি উদার বৈরাগ্য আছে । যখন অ্যাস্ট্রনমি প’ড়ে নক্ষত্ৰজগতের স্বষ্টির রহস্যশালার মাঝখানে গিয়ে দাড়ানো যায়, তখন জীবনের ছোটো ছোটো ভারগুলো কতই লঘু হয়ে ষায় ! তেমনি আপনাকে যদি একটা বৃহৎ ত্যাগস্বীকার কিম্বা পৃথিবীর একটা বৃহৎ ব্যাপারের সঙ্গে আবদ্ধ করে দেওয়া যায়, তা হলে তৎক্ষণাৎ আপনার অস্তিত্বভার অনায়াসে বহনযোগ্য বলে মনে হয় । দুর্ভাগ্যক্রমে আমাদের দেশের শিক্ষিত লোকদের মধ্যেও ভাবের সমীরণ চতুর্দিকে সঞ্চারিত সমীরিত নয়, জীবনের সঙ্গে ভাবের সংশ্ৰব নিতান্তই অল্প, সাহিত্য যে মানবলোকে একটা প্রধান শক্তি তা আমাদের দেশের লোকের সংসর্গে কিছুতেই অনুভব করা যায় না— নিজের মনের আদর্শ ২৮২