পাতা:চিঠিপত্র (অষ্টাদশ খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জল কাদার মধ্যে হিচড়ে এনে সাবধান করে দিয়েছিলেন ? কিন্তু মানলুম না, বৃহস্পতিবারের বারবেলায় কৃষ্ণ প্রতিপদ তিথিতে রেলে চড়ে বসলুম। দুদিন আগে রথী আমাদের একখানা মোটর গাড়ি গোহাটি {য] ষ্টেশনে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন ইচ্ছা ছিল সেই গাড়িটাতে করে পাহাড়ে চড়ব। সঙ্গে আমাদের আছেন দিনুবাবু এবং কমল বৌঠান, এবং আছেন সাধুচরণ, এবং আছে বাক্স তোরঙ্গ নানা আকার এবং আয়তনের, এবং সঙ্গে সঙ্গে চলেচেন, আমাদের ভাগ্যদেবতা, তাকে টিকিট কিনতে হয় নি। সাস্তাহার স্টেশনে আসাম মেলে চড়লুম, এমনি কসে ঝাকানি দিতে লাগল যে, দেহের রস রক্ত যদি হত দই তাহলে ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই প্রাণটা তার থেকে মাখন হয়ে ছেড়ে বেরিয়ে আসত। অদ্ধেক রাত্রে বজ্রনাদ সহকারে মুষলধারে বৃষ্টি হতে লাগল। গৌহাটির নিকটবৰ্ত্তী ষ্টেশনে যখন খেয়া জাহাজে ব্ৰহ্মপুত্রে ওঠা গেল তখন আকাশ মেঘে আচ্ছন্ন কিন্তু বৃষ্টি নেই। ওপারে গিয়েই মোটর গাড়িতে চড়ব বলে খেয়ে দেয়ে সেজে গুজে গুছিয়ে গাছিয়ে বসে আছি— গিয়ে শুনি ব্রহ্মপুত্রে বন্যা এসেচে বলে এখনো ঘাটে মোটর নামাতে পারে নি। এদিকে বেলা দুটোর পরে মোটর ছাড়তে দেয় না। অনেক বকবকি দাপাদাপি ছুটোছুটি হাকডাক করে বেলা আড়াইটের সময় গাড়ি এল, কিন্তু সময় গেল। তীরের কাছে একটা শূন্য জাহাজ বাধা ছিল সেইটেতে উঠে মুটের সাহায্যে কয়েক বালতি ব্ৰহ্মপুত্রের জল তুলিয়ে আনা গেল— স্নান করবার ইচ্ছা। ভূগোলে পড়া গেছে পৃথিবীর তিন ভাগ জল এক ভাগ স্থল, কিন্তু বন্যার ব্রহ্মপুত্রের ঘোলা স্রোতে সেদিন তিনভাগ স্থল একভাগ জল। তাতে দেহ স্নিগ্ধ হল বটে কিন্তু নিৰ্ম্মল হল বলতে পারি নে। বোলপুর থেকে রাত্রি এগারোটার সময় হাওড়ার তীরে কাদার মধ্যে পড়ে যেমন গঙ্গাস্নান হয়েছিল, সেদিন ব্ৰহ্মপুত্রের জলে স্নানটাও তেমনি পঙ্কিল। তা হোক, এবার আমার ভাগ্য আমাকে ঘাড়ে ধরে পূণ্যতীর্থোদকে স্নান করিয়ে নিলেন। কোথায় রান্ত্রি 》8