পাতা:চিঠিপত্র (অষ্টাদশ খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যে ঘরে বসে চিঠি লিখচি সে ঘরের ছবি মনে আনতে পারবেনা। রাজার অতিথিশালা, মত্ত ইমারত, কাপেটমণ্ডিত পদাবগুষ্ঠিত উন্নত ভিত্তিমান ঘর, গোলাপচিত্রিত ছিটের কাপড়ে ঢাকা মোটা মোটা আসবাবগুলো আমার প্রতি কৃপাকটাক্ষপাত করচে। তারা নীরবে পরস্পরের প্রতি চোখ টিপা-টিপি করে বলচে এই মনুষটার চেয়ে ঢের বড়বড় লোককে আমরা অভ্যর্থনা করেছি, যথা, স্বয়ং পুলিসের ইনস্পেক্টর সাহেব, বোম্বাই ইত্যাদি ইত্যাদি। এই ঘরের একপ্রান্তে রজত-লেখাধার শোভিত সুপ্রশস্ত সুচিকণ লেখবার টেবিলে বসে সঙ্কুচিত মনে লিখে যাচ্চি। মরিস" আমার সঙ্গীরূপে এখানে এসেচে কিন্তু তার কুলমান সন্ত্রম গড়ের-বাদ্যকার ফিরিঙ্গিকুলপুঙ্গবদের ঠিক সমান না হওয়াতে তাকে দূরে অন্য বাড়িতে বাসা দেওয়া হয়েচে । এই বহু কক্ষবিচিত্র প্রাসাদ সৌধে আমি একা; সঙ্গীর মধ্যে বনমালী" নামধারী আমার উৎকলবাসী সেবক। সুতরাং আমার হাতে “কালোহয়ং নিরবধিঃ” তা ছাড়া বিপুল চ বাসা। কালযাপনের সাহায্যকল্পে মাঝে মাঝে এরা আমাকে উপলবন্ধুর দুর্গমপথে এখানকার মরুপ্রাস্তরের মাঝখানে ঘুরিয়ে আনচে। গতকল্য মধ্যদিনের অসহ্য উত্তাপে আটঘণ্টাকাল বিচলিত দেহে অবিচলিত ধৈর্যে এই রকম রথযাত্রা করে এসেচি— সে রকম উৎকটমস্থনে আলোড়নেও যখন প্রাণ পদার্থটা দেহ থেকে উৎক্ষিপ্ত হয়ে আসেনি তখন বোধ হচ্চে আমার আয়ুটি নেহাৎ সদ্যঃপাতী নয়। কিন্তু বিশ্রামের জন্যে চিত্ত ব্যাকুল হয়ে উঠেচে। ইতি ৭ নবেম্বর ১৯২৩ ভানুদাদা १९8