পাতা:চিঠিপত্র (অষ্টাদশ খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৬৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পড়েচে । আমাকে দেশে বিদেশে একটা বাণী বহন করে নিয়ে যেতে হবে আমার উপরে সেই হুকুম। সে বাণী যে কার সে আমি অনেক সময়ে নিজেই ভেবে পাই নে। কেন না আমি ত ইচ্ছে করে ভেবে বলতে পারি নে। যেমন দক্ষিণের হাওয়ার মধ্যে যে অরূপ আনন্দ ভেসে বেড়ায় সেই আনন্দটি কেমন করে হঠাৎ বসন্তের লতার মধ্যে রূপ ধরে ওঠে তেমনি আকাশপথে যে অশ্রুত বাণী চলাচল করচে কেমন করে আমার অগোচরে সে আমার কথার মধ্যে স্বরগ্রহণ করে । সেই কথা আমাকে শোনাতে হবে এই হ’ল আমার একমাত্র কাজ। এবার কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে আশুবাবু যখন আমাকে তিনটে বক্তৃতা করতে বললেন আমি কিছুই ভেবে পাই নি আমি কি বলব। যখন সেনেট হলে গিয়ে দাঁড়ালুম দেখলুম অত বড় হল ঠাসাঠাসি ভৰ্ত্তি করি {য] লোক বাইরের বারান্দায় পর্যন্ত ভিড় করে দাড়িয়েচে । সবাই বলে চার পাঁচ হাজার শ্রোতা হয়েছিল। মনের মধ্যে ভয় হল, কিচ্ছুই ত তৈরি হয়ে আসি নি ; এক টুকরো কাগজে এক লাইনও নোট লেখা হয় নি। কিন্তু পালাবার পথ ত ছিল না। উঠে দাঁড়ালুম যেমন করে হোক বলতে আরম্ভ করলুম। দেখি বলবার কথা ত আপনিই জুটে যাচ্চে। সে সব কথা যেমন অন্যে শুনচে তেমনি আমি নিজেও শুনচি। সে ত আমারই বানিয়ে বলা কথা নয়। এর থেকে আমি এইটুকুমাত্র বুঝে নিয়েচি যে, আমি বাণীর বাহন— কাজেই এই বাণী ছড়িয়ে দেওয়াই আমার কাজ— আমাকে চুপ করে থাকতে দেবে না, আমি একটা জায়গায় বসে থাকতেও পারব না। কাজেই চীন আমাকে ডাক দিলে তখন আমাকে চীনে যেতেই হবে। অথচ আমি যখন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলে একটা পদার্থের দিকে তাকিয়ে দেখি তখন দেখতে পাই সে ত বিশেষ কেউ একজন নয়। তাকেই যদি কিছু একটা বলতে হত তাহলে সে নেহাৎ বোকার মত বলত। তার বিশেষ কিছু জানাশোনাও নেই। হয় ত, জানাশোনার বোঝাই দিয়ে যদি তার মনের সমস্ত ফাক ভরা থাকত, তাহলে তার মধ্যে দিয়ে ૨૭ છે