পাতা:চিঠিপত্র (অষ্টাদশ খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আজ নির্জন মাঠের উপর জ্যোৎস্না ছড়িয়ে পড়েচে। বেশ মধুর হাওয়াটি দিচ্চে। শালবীথিকায় ডালে ডালে শালের মঞ্জরী ধরেচে— চলতে চলতে এখানে ওখানে হঠাৎ তার গন্ধে চমক লাগিয়ে দেয়। যখন সমুদ্রে পাড়ি দিতে থাকব তখনি চাদ পূর্ণিমায় গিয়ে পৌঁছবে। নীল সাগরের উপর শুক্লরাত্রি খুব মধুর বটে— কিন্তু তবু, জ্যোৎস্না সেখানে যেন বিধবার মত। বড় বেশি নিরলঙ্কার, বড় বেশি নিঃসঙ্গ— সেখানে চাদ যেন তপস্বী শিবের ললাটের চাদের মত। গাছের ছায়াটি না হলে জ্যোৎস্নার ঠিক জুড়ি মেলে না । সেই যেন শ্যামের সঙ্গে রাধার মিলন । মিস গ্রীন এবারে দেশে চলে যাচ্চে। আমাদের সঙ্গে চীন পৰ্য্যন্ত যাচ্চে। তার পরে যাবে আমেরিকায়। আজ তার বিদায়ের অনুষ্ঠান হ’ল।” বাজিয়ে, মেয়েদের হাতে তাকে বরণ করিয়ে, দামী একটি ময়ূরকষ্ঠী সিস্কের শাড়ি অর্ঘ্য দিয়ে বেশ একটু ধুমধাম করা হল। মেয়েরা গাইলে, “ভরা থাক ভরা থাক” ইত্যাদি। শেষে একটা গান গাওয়ানো হল, তার আরম্ভটা হচ্চে এই রকম— “পাগল যে তুই, কষ্ঠ ভরে’ জানিয়ে দে তাই সাহস করে।” ওটা আর কিছু নয়, নিজের পরিচয়টা ঘোষণা করে দিলুম। আজ বোধ হয় অন্য দিনের চেয়েও বেশি রাত হয়েচে । আমার মগজটা ভিজে স্পঞ্জের মত ঘুমে একেবারে অভিষিক্ত হয়ে আছে তাহলে এবার শুতে যাই। কিন্তু দেখেচি শুয়েও ক্লান্ডির অবসাদটা যেতে চায় না— ক্লাস্তি আমার মেরুদণ্ডটার উপর ভর করে দিন রাত আমার সঙ্গ নিয়েচে । হয় ত জাহাজে চড়ে সমুদ্রের হাওয়ায় তাকে বিসর্জন দিতে পারব। ইতি ২ [৩] চৈত্র ১৩৩০° ভানুদাদা ২৬৫