বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:চীন ভ্রমণ - ইন্দুমাধব মল্লিক.pdf/১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
চীন ভ্রমণ।

জাহাজ আস্তে আস্তে চালাইতে হইল। বৈকালে ডায়মণ্ডহারবারের আলোক-গৃহ (Light house) ও কেল্লা দেখিলাম। এ সকল স্থানে নদীর মুখ অতিশয় প্রশস্ত-এক তীর হইতে অন্য তীর প্রায় দেখা যায় না। ইহার কিছু নিম্নে সাগর পয়েণ্ট। এই স্থানটি অতি ভয়ানক স্থান, -চোরাবালির চূড়ায় পড়িয়া এই স্থানে বিস্তর জাহাজ মারা গিয়াছে। সেই কারণ আস্তে আস্তে, সাবধানে জাহাজ চালাইতে হয়। হালকা ক্ষুদ্র নৌকা (Life-Boat) গুলি সততই জলে নামাইবার জন্য প্রস্তুত রাখিতে হয়। চোরাবালিব চড়ায় জাহাজ লাগিয়া বিপদগ্রস্থ হইলে জাহাজের আরোহীরা এই বোটে চড়িয়া প্রাণ বাঁচাইতে পারে।

 যে গঙ্গা-সাগরে তীর্থযাত্রীরা তীর্থ করিতে ও স্নান করিতে যায়,সেই সাগর দ্বীপ এই খানেই অবস্থিত। দ্বীপ ছাড়া তথায় এখন আর কিছুই দেখিবার নাই ইহার পরেই সমুদ্র আরম্ভ হইয়াছে।

 কাপ্তেনই জাহাজের প্রধান কর্ম্মচারী। তাঁহার আদেশ মতই সমুদ্রে জাহাজ চালান হয়; কিন্তু কোনও বন্দরের ভিতর তিনি জাহাজ চালাইতে পারেন না। তার জন্য আলাহিদা লোক আছে,—তাদের “পাইলট” (Pilot) বলে। এতক্ষণ তিনিই জাহাজ চালাইয়া আসিয়াছিলেন। এই অবধি পৌঁছাইয়া দিয়া, একখানি ছোট বোটে চড়িয়া পাইলট কলিকাতার দিকে ফিরিলেন। সাগর-তরঙ্গে বোটখানি হেলিতে-দুলিতে কলিকাতার দিকে চলিয়া গেল।

 ক্রমে বেলাভূমি রেখার মত সূক্ষ্ম হইয়া আসিল, এবং পরে একেবারে অদৃশ্য হইল। তখন কালিদাসের সেই, -“আভাতি বেলা লবণাম্বু দ্বারা নিবন্ধেব কলঙ্করেখা।” কবিতাটা মনে পড়িয়া গেল। তৎপরে আর চারি দিকে কিছুই নাই, কেবল অনন্ত নীল জলরাশি! কেবল কতকগুলি সাদা সুস্থকায় জলচর পক্ষী জাহাজের চারি দিকে উডিয়া বেড়াইতেছিল। উপরে মেঘমণ্ডিত আকাশ। পশ্চিম আকাশ