রক্তিম আভায় রঞ্জিত হইয়া উঠিল। বারিধিবক্ষেও সেই আভা প্রতিফলিত হইল। ক্রমে সুর্যদেব অস্ত গেলেন। ধারণী তিমিরাবগুণ্ঠিতা হইলেন। আকাশে শত সহস্ৰ হীরক খণ্ড জ্বলিয়া উঠিল।
নদীমুখ হইতে সমুদ্র পড়িলে ভিন্ন ভিন্ন স্থানে জলের বর্ণ পরিবর্ত্তন একটি বিচিত্র দৃশ্য। ময়লা মাটির মিশ্রণে নদী জলের রঙ ও ময়লা পাটকিলে বর্ণ। সমুদ্র জলের রঙ ঘোর নীল বর্ণ; কিন্তু নির্ম্মল ও স্বচ্ছ। নদী যেখানে সমুদ্রে মিশিয়াছে, সে স্থানের জলের রঙ পাটকিলে ও লাল, উভয় রঙের মিশ্রণে সবুজ হইয়াছে। সমুদ্রে মিশিবার সময় নদীবেগ প্রশমিত হয় বলিয়া এই স্থানে নদীজলের যত ময়লা মাটি তথায় থিতাইয়া পড়ে ও সেই কারণে চোরাবালির চড়া প্রস্তুত হয়। সুতরাং এই সকল স্থান দিয়া জাহাজের গমনাগমন অত্যন্ত বিপজ্জনক। সাগর পয়েণ্টের কাছে জাহাজ তাই সন্তর্পণে আসিল। ক্রমে পাটকিলেবর্ণ সবুজ হইয়া পরে নীল হইয়া গেল। এখন হইতে কেবল নীল জলরাশি।
জাহাজ দিন রাত চলে। কৃষ্ণপক্ষের ঘোর অন্ধকারে অনন্ত জলরাশি ভেদ করিয়া জাহাজ সমস্ত রাত্রি চলিতে লাগিল। এমন অনিশ্চিত স্থানে কি বিদ্যার বলে, কি সাহসে যে আপনার গন্তব্য পথ ঠিক রাখিয়া জাহাজ চোখ বুজিয়া চলে, সে কথা ভাবিলেও বিস্মিত হইতে হয়।
জাহাজগুলি এত বড় ও এত সুন্দর যে, এক একটা জাহাজ যেন এক একটি সহর। আমাদের জাহাজে সর্ব্বসমেত প্রায় ১২ শত লোক ছিল। সকলেরই থাকিবার নির্দিষ্ট স্থান আছে। সকল বিষয়েই সুব্যবস্থা। জাহাজখানি ৩ শত ফিট লম্বা ও ৪০ ফিট চওড়া। জাহাজের পিছনে প্রথম শ্রেণী অবস্থিত। দুই ধারে দুই সার কেবিন ও মধ্যে প্রথমশ্রেণীর বৈঠকখানা (Saloon) ও ভোজনাগার (Dining room)। জাহাজের মধ্যস্থলে এঞ্জিন (Engine) ও তাহার দুই পার্শ্বে