পাতা:চীন ভ্রমণ - ইন্দুমাধব মল্লিক.pdf/১৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
হংকং।
১২১

ব’লে কতকটা রক্ষা। আমাদের মথুরাও অনেকটা এই রকম। তবে এখানে পথ চলিবার কষ্ট নাই; কারণ সব ফুটপাথগুলি বারান্দার মত ঢাকা, ছাতাওয়ালা, -সেখান দিয়া বরাবর চলিলে রৌদ্রবৃষ্টি গায়ে লাগে না। বাড়ীগুলি খুব উচু উচু, তার নীচে দোকান ও উপরে থাকিবার স্থান। সব বাড়ীগুলিই গায়ে গায়ে, চারিপাঁচতলা উচু। নীচেতলার ভাড়া অসম্ভব বেশী। একটা দরজাওয়ালা ছয় কি সাত হাত লম্বা একটি ঘরের মাসিক ভাড়া ৫০ ডলার। বাড়ীর উপর তলার ভাড়া কম। সবই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। উপরকার বারান্দা টবে করা ফুল গাছে পরিপূর্ণ। জনতাপূর্ণ দোকানের টেবিলেও ছোট সুন্দর কাজ করা টবে ছোট আইরিস্ গাছ ফুলে ভরা। ফিরিওয়ালাও পথে পথে ফুল গাছ ফিরি ক’রে বেড়ায়; ফিরিওয়ালার সংখ্যা নাই। সকল আবশ্যকীয় দ্রব্যেরই ফিরিওয়ালা ঘুরে। তাদের সকলকেই দেখতে গম্ভীর ও নিজ নিজ কাজে নিবিষ্টচিত্ত। সকলেই হাঁকে বা এক এক প্রকার শ্রুতিমধুর শব্দ ক’রে আপনাদের আগমন-বার্ত্তা জানায়। কামার ছোট ছোট লৌহ নির্ম্মিত ঝুমঝুমী বাজাতে বাজাতে যায়। ছুতোর দুটি কাঠে শব্দ করে। ফলওয়ালা ফলগুলি ছাড়িয়ে, তার আঁটি বাদ দিয়ে, ছোট ছোট খণ্ড করে, একটী কাঠিতে বেঁধে, তাই ফিরি করে,—তার সঙ্কেত ভাঙ্গা গলার ডাক। যে কাণ হ'তে খোল বার করে, সে মধুর স্বরে হাঁক দেয়। যে গল্প শুনায়, সে একটি বেহালা বাজাইতে যায়। যে ভাগ্য গননা করে সে রঙ্গিণ পোষাক প'রে যায়; তার স্বর যেন স্তুতি গানের মত। যে গান শুনায় সে নিজে গান গাহিতে গাহিতে যায়। সেই সকল শব্দ উচু সারবন্দী দু’ধারের বাড়ীর মধ্যকার অপ্রশস্ত পথে প্রতিধ্বনিত হয়। সে অবিশ্রান্ত জনতার দিকে চেয়ে দেখলে মনে হয়, যেন পিপীলিকার সার দেখাচি।

 হংকং প্রভৃতি চীনে মুলুকের সব দেশেই রাস্তাগুলি অপ্রশস্ত।