পাতা:চীন ভ্রমণ - ইন্দুমাধব মল্লিক.pdf/১৯০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৮০
চীন ভ্রমণ।

না। ইহা সবে এক শত বৎসর মাত্র প্রচলিত হইয়াই চীন জাতিকে এত অধঃপতিত করিয়া ফেলিয়াছে। আগে আগে সকল আফিমই ভারতবর্ষ হইতে রপ্তানী হইত, কিন্তু এখন চীন দেশেও বিস্তর আফিমের চাষ হয়। তবে জমির উর্ব্বরাশক্তি বড়ই কমিয়া যায় বলিয়া চাষের উপযোগী অল্প জমিবিশিষ্ট চীন দেশের অনেক জমিদার নিজেদের ভূমিতে আফিম চাষ করিতে দেন না।

 এই ‘ম্যাকাউ’ সম্বন্ধে দু’একটি কথা সংক্ষেপে বলি। এই ম্যাকাউ নিৰ্জ্জন গিরি-গুহায় বসিয়া নির্ব্বাসিত পর্তুগীজ কবি কেমোয়েন্ উচ্চআদর্শের পদ্ম লিখিয়াছিলেন বলিয়া এই ক্ষুদ্র স্থানটি চিরস্মরণীয় হইয়া রহিয়াছে। জাহাজে যাত্রীদের পড়িবার জন্য যে সব পুস্তক রাখা হয় তার মধ্যে একখানি পুস্তকে এই সকল পদ্যের ইংরাজী তরজমা ছিল। কবির নির্জ্জন-বাসে লিখিত সেই সকল মধুময়ী কবিতার বিষয় লিখিতে গেলে পুস্তক অনেক বড় হইবে। তবে একটু মাত্র না বলিয়া থাকিতে পারিব না। সে কবির কাব্যের বিশেষত্ব এই যে, তিনি নিরর্থক ভ্রকুটীপূর্ণ সমাজ-বন্ধন অসহ্য মনে করিতেন; তাই তাঁহার হৃদয়ের কবিতা-ভাব-মাধুর্য্য এত বেশী ছিল যে, পড়িলেই মনে হয় যেন, তিনি প্রতি কথাই অন্তরের সহিত লিখিতেছেন। বিষয় —এক রাজপুত্র গুপ্তভাবে একটী নীচ বংশীয় রমণীকে একান্ত প্রণয়ে বিবাহ করেন; রাজা তাহা জানিতে পারিয়া বংশ-মর্য্যাদার হানি হইবার ভয়ে বিষপ্রয়োগে সেই রমণীকে হত্যা করেন। পরে যুবরাজ যখন রাজা হইলেন, তখন নিজ প্রণয়িনীকে গোর হইতে উঠাইয়া তাঁহার দেহে সুগন্ধ লেপন ও মহামূল্য রাণীর পরিচ্ছদে বিভূষিত করিয়া নগরের শ্রেষ্ঠ স্থানে কবর দিলেন। অপূর্ণ সাধ মিটাইবার জন্য সে সমাধিস্থলও যেন কুঞ্জবন বা প্রমোদ-উদ্যানের মত সাজান হইল। লতা-মণ্ডপের ভিতর রাশি রাশি ফুল সুগন্ধ বিলায় আর পাখীরা বৃক্ষশাখে বসিয়া মধুর