পরে সে আপনিই বলতে লাগিল,—“আমার কেউ নাই, আমি ইংরাজি স্কুলেও কিছুদিন পড়েছিলাম। তার পর এখানে এসে এক মালয় স্ত্রীলোককে বিয়ে করেছি। সে বড় ভাল। সে আমায় বলে, 'তুমি যে দেশে যাবে আমিও সঙ্গে যাব,—মার বারণ শুনব না'।”
জিজ্ঞাসা করিয়া জানিলাম লোকটি রোজ ২০ সেণ্ট রোজগার করে। তার স্ত্রী অনেক ভাল জিনিষ তাকেই খাওয়ায়, আপনি খায় না। সে নিজে সারাদিন খাটে, বাড়ী যেতে পায় না; আর তার স্ত্রী রোজ দুপুরৰেলা ঘরের কাজ সেরে তার সঙ্গে দেখা করতে আসে। আজ আসে নাই। স্ত্রীর পায়ে সেদিন একটা পাতর গড়িয়ে চোট লেগেছে। তাই স্ত্রীর পায়ে আাজ সে লসুনের তেল মালিষ ক’রে দিয়ে এসেছে।
সে বলিল,—“এক জনা বলেছিল— এতেই সেরে যাবে। তার পায়ে বড় ব্যথা হয়েছে,— সে চলতে পারে না।” এই সব কথা এমন সরল কাঁদ-কাঁদ ভাধে ব’লতে লাগল যে, আমার ইচ্ছে হ’চ্ছিল, ছুটে গিয়ে তার স্ত্রীর পায়ে এমন ঔষধ বেঁধে দিয়ে আসি, যাতে তার ব্যথা এখনি ভাল হ’য়ে যায়,—এখনি তার সঙ্গে দেখা করতে আসতে পারে।
সেই কুলীর সহিত আমার আরো কথা কহিবার ইচ্ছা ছিল, কিন্তু আমার সহযাত্রী-সঙ্গী একটী সাহেব বড় তাড়াতাড়ি করিতে লাগিলেন; সুতরাং আর বেশী কথা হইল না। আমি কেবল জিজ্ঞাসা করিলাম-“তুমি যে গানটী গাচ্ছিলে, তার মানে কি?” সে যাহা বুঝাইয়া দিল, বাঙ্গালা ভাষায় তার ভাব এইরূপ,—
“তুমি আমার পরম হিতাকাঙ্ক্ষী। আমার ঘোর দুর্দ্দিনের সময় তুমি কোথায় ছিলে? জীবনের প্রথম অবস্থায় তোমাকে পাই নাই কেন? এতদিনে পেয়েছি,—সব ব্যথা জুড়িয়ে দিয়েছ, সব কষ্ট ফুলে গেছি।”