পাতা:চীন ভ্রমণ - ইন্দুমাধব মল্লিক.pdf/৫৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৪
চীন ভ্রমণ

হইয়া লোকগুলি কায়িক পরিশ্রমে, সুস্থ শরীরে, অতিসুখে দিন যাপন করিতেছে। সকলেরই মুখে হাসি,—সর্ব্বত্রই আনন্দের রোল। উদ্যান হইতে বাহির হইয়া একটি স্থানে কিন্তু বড়ই মর্ম্মস্পর্শী দৃশ্য দেখিলাম। কোন গৃহের কর্ত্তা ভর্ত্তা রক্ষক ও পালক আজ ইহধাম ছেড়ে গিয়েছেন। কাপড় ঢাকা তাঁহার শবদেহ গৃহদ্বারে শয়ান আছে। মৃত ব্যক্তিৰ স্ত্রী ধূলায় লুটিয়ে কাঁদচেন। কাপড় তুলে মৃত পতির মুখ দেখতে যাচ্চেন, তাঁর আত্মীয়েরা বাধা দিচ্চে। বড় ছেলেগুলি ও ছোট ছেলে মেয়ে গুলি কাঁদচে। পাড়াপাড়শীরা কাঁদচে। লোকে পথ দিয়ে যেতে যেতে দাঁড়িয়ে কাঁদচে। এক প্রতিবেশিনী তার ছোট ছেলে কোলে ক’রে কাঁদচে। তার সেই ছোট ছেলেটীও মায়ের মুখের দিকে চেয়ে কাঁদচে আর ছোট হাতখানি বাড়িয়ে মায়ের চ'খের জল মুছে দিচ্চে।

 বটানিক্যাল গার্ডেন হইতে আরো খানিক দূরে এক স্থানে দেখি, কতকগুলি কুলি এক জায়গায় বারুদে আগুন দিয়ে পাহাড় ফাটিয়ে পতর ভাঙছে। ৩া’দের মধ্যে একটী কৃষ্ণকায় বলিষ্ঠ লোক সুকণ্ঠে, কান্নার মত অতি করুণস্বরে, গান গাহিতে গাহিতে পাতর বহিতেছিল। তাহার মুখের গড়ন মালয় দেশীর মতও না, চীনেম্যানের মতও না। তাহার নাসিকা উন্নত। আমাদের দেখিয়া সে ঘন ঘন আমার দিকে চাহিতে লাগিল। অবশেষে পাতরগুলি মাটিতে নামাইয়া আমার কাছে আসিয়া হিন্দীতে জিজ্ঞাসা করিল,—“আপনি কি হিন্দুস্থান হ’তে এসেছেন?” আমি আশ্চর্য্য হ’য়ে উস্তুর দিলাম,—“হাঁ কিন্তু তুমি কেমন ক’রে জানলে?” সে বলিল,—“আমার বাড়ী মাদ্রাজে। আমি বড় রাগী, ঝগড়া ক’রে একটী লোককে খুন করাতে আমার মেয়াদ হ'য়েছিল,বছর কতক হ'ল খালাস পেয়ে আমি এক ব্যবসাদারের সঙ্গে এখানে এসে কুলির কাজ কচ্চি।”