পাতা:চীন ভ্রমণ - ইন্দুমাধব মল্লিক.pdf/৮১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

চীন সমুদ্র।
৭১

কখন কখন এরূপ সময়ে জলস্তম্ভও উৎপন্ন হয়। তাহা ধীরে ধীরে এক ধারে অগ্রসর হইতে থাকে। জাহাজ তাহাতে পড়িলে আর বাঁচাইবার উপায় নাই। এমন কি জাহাজ হইতে আধ মাইল দূরেও যদি জলস্তম্ভ আপনি ভাঙ্গিয়া যায়, তাহা হইলেও জাহাজ বিপদগ্রস্ত হয়। এই কারণে জলস্তম্ভ দেখিলেই দূর হইতে গোলা মারিয়া তাহাকে ভাঙ্গিয়া দিতে হয়। সেই জন্য এবং অন্যান্য কারণে জাহাজে কামান থাকে। যখন নিজে উত্থানশক্তিরহিত হইয়া পড়িয়া থাকিতাম, তখন এই সকল কথা মনে আসিত ও এই সকল ভয়ের দৃশ্য অহরহ মনশ্চক্ষুর সামনে জাগিয়া উঠিত। তখনই মনে হইত, এতে সব আত্মীয় বন্ধুর নিষেধ না শুনে একপ বিপদসঙ্কুল স্থানে জেদ ক’রে এসে ভাল কাজ করি নাই। আবার দুই তিন দিন বাদে যখন সব কষ্ট দূর হ’ল, তখন সে সব যন্ত্রণার কথা ভুলে গোলাম।

 এরূপ তুফানেও চীনেম্যানেরা চাইনিজ 'জাঙ্কে' ও বড় বড় চীনে বজরা ক’রে সমুদ্রে মাছ ধরিতে যায়। সেগুলি খুব বড় নৌকা, কেবল পাশ গুলি খুব উচু ও সামনের ও পিছনের গলুই অন্য নৌকার মত সরু না হ’য়ে চেপ্টা। নৌকায় তিনটি মাস্তুল আছে। সেই মাস্তুলগুলিতে পাল তুলে দিলে নৌকা চলে। ঐ নৌকা এরূপ ভাবে গঠিত ও এমন সুদক্ষ ভাবে পরিচালিত যে, অমন সমুদ্রে, অত তুফানেও তাহা ডুবে না। চীনদেশে অর্থোপার্জ্জন করা এত কষ্টকর যে, প্রাণের মমতা একেবারে ত্যাগ ক’রে চীনের এইরূপ অতি ভীষণ চীন সমুদ্রে সপরিবারে মাছ ধরিতে যায়। সপরিবারে কেন বলিলাম, সে কথা পরের প্রবন্ধে বলিব। আর আর্থার-বন্দর অবরোধ কালে এইরূপ চীনে জাঙ্কে করিয়াই খাদ্য সামগ্রী চুপে চুপে বন্দরে ঢুকিত।

 এই স্থানে নানা জিনিষ দেখিয়া ও নানা লোকের সঙ্গে মিশিয়া “কূপ মণ্ডক” অবস্থায় থাকিয়া এত দিন যাহা স্বপ্নেও ভাবি নাই,