পাতা:চীন ভ্রমণ - ইন্দুমাধব মল্লিক.pdf/৯১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

চীন জাহাজে যাত্রিদল
৮১

না। শরীরে স্বাস্থ্য ও মনে আনন্দ থাকিলে যেরূপে জীবন কাটে ইহাদের সেইরূপই দেখিতাম। অপরে কি ভাবচে না ভাবচে ভেবে আদব-কায়দার জাঁতায় জীবনকে পেষণের কোনও চেষ্টা ছিল না। বুকের উপর অবধি লুঙ্গী বাঁধা থাকে বলিয়া তাঁহাদের চলা ফেরা যেন আড়ষ্ট-আড়ষ্ট ভাবের। জমিতে পা ঘেঁষিয়া চলিতে হয়। রেঙ্গুনে এক দিন আসিবার সময় মগের নাচ দেখিয়াছিলাম। মগরমণীদল সারিবন্দী হইয়া দাঁড়াইয়া একত্র অঙ্গ হেলাইয়া নাচে, দেখিতে অতি সুন্দর। কিন্তু আমাদের দেশের মত নাচে চঞ্চল অঙ্গ-বিক্ষেপ নাই।

 Fitz Geraldএর যে বিখ্যাত সার্কাস আসিয়া কলিকাতায় খেলা দেখাইয়া গিয়াছে, তাহারা হংকং, সিঙ্গাপুর,পিনাঙ ইত্যাদি স্থানেও ঐরূপ খেলা দেখাইয়া আসিয়াছে। তাহারা আমাদের জাহাজেই ছিল। তাহাদের চাকর-বাকরদের দেখিয়া মনে হইত, নীচ শ্রেণীর ইয়োরোপীয়রা অনেকটা আমাদের দেশের নীচজাতীয় লোকেরই মত। পশুর মত আচার ব্যবহার -খাওয়া শোয়া। সুর ক'রে অঙ্গভঙ্গী করে কথা কওয়া, আর কথায় কখায় দিব্যি গালা; আর অশ্লীল বিষয়ের আলোচনা করা। তাহাদের দলে যে সব স্ত্রীলোক তারে ও ঘোড়ার খেলা দেখাইত, তাহাদেরও স্বভাব সংসৰ্গদোষে ঐরূপ হইয়াছে।

 সকল জাতির স্ত্রীলোকের তুলনায় চীনজাতীয় স্ত্রীলোককে দেখিতাম, সর্ব্বাপেক্ষা ভিন্ন প্রকৃতির; মুখে হাসি নাই,উচ্চ কথা নাই। নির্দিষ্ট স্থানে বসিয়া সন্তানের যত্ন করিতেন।

 দেখিতাম, যদিও ভিন্ন ভিন্ন জাতীয় লোকের ভাষা বিভিন্ন বলিয়া তাহারা পরস্পরের সহিত মিশিতে পারিত না, কিন্তু ভিন্ন ভিন্ন জাতীয় ছেলেরা অনায়াসে পরস্পরের সহিত মিলিয়া মিশিয়া খেলা করিত। শিশু-ভাষা যেন একটি স্বতন্ত্র ভাষা, সকল শিশুই জানে,তাই তাহাদের পরস্পরের মনের ভাব বুঝিতে কষ্ট হয় না।