পাতা:চীন ভ্রমণ - ইন্দুমাধব মল্লিক.pdf/৯৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

চীন জাহজে যাত্রিদল।
৮৭

অন্য সকলের মত নয়; বেশভূষায়—তাঁহার অবহেলা, এবং দৃষ্টি শন্যময়।

 এক দিনেই তাঁহার মনের ভাব ও জীবনের ইতিহাস জানিলাম। তিনি একজন মধ্যবিত্ত্ব অবস্থার সওদাগর। দেহ ক্ষীণ। বয়স ৩০।৩৫ বৎসর মাত্র। দ্বিতীয় শ্রেণীর যাত্রী। সর্ব্বদা লোকের জনতা ছেড়ে একা একধারে ব’সে থাকতেন। কাহারও সহিত মিশা নাই-কাহারও সহিত কথা নাই; কেবল অসীম সমুদ্র ও অনন্ত নীল আকাশের দিকে চেয়ে সময় কাটাতেন; কেবল একটি পরিচিত সমবয়স্ক চীনেম্যানের সহিত কখন কখন মনের কথা কহিতেন মাত্র। সে কথার ভাব, চোখের জল ছাড়া কান্নারই রূপান্তর।

 আজ দুই বৎসর হলো তাঁর স্ত্রী-বিয়োগ হয়েছে। আঠার দিনের একটিমাত্র শিশু কন্যা রেখে তিনি চ’লে গেছেন। মাতৃহীনা মেয়েটিকে তিনি মার নামেই ডাকেন। প্রথম প্রসবের পরই তাঁহার মৃত্যু ঘটে। কত ডাক্তার দেখিয়েছিলেন, কিছু হয় নাই। তবু এখনও কেবলই বলেন- “যদি এ চিকিৎসা না ক’রে অন্য চিকিৎসা ক’রতাম হয়তো তিনি ভাল হতেন।”

 জীবনে যেন বিষম বিপ্লব ঘ’টেছে ইহজন্মের মত চারিদিক শূন্য হ’য়ে গেছে। হাত থেকে রুমাল উড়ে গেলে কুড়াইয়া লইতেন না। বৃষ্টি পড়িলে যথাসময়ে সরিয়া বসিতেন না। খাবার ঘণ্টা পড়িলেও খেতে যেতেন না; অন্তরে এমন দারুণ ব্যথা লেগেছে যে-সে কথা, সে প্রসঙ্গ, একবার তুললে হয়-অমনি সবাকার সামনেই ছেলে মানুষের মত আকুল হ'য়ে কাঁদেন।

 ঘড়ির চেন হাতীর দাঁতে আঁকা একখানি ছোট রমণী মুর্ত্তি তাঁর বুকে ঝুলান। ছবির অঙ্গ প্রতাঙ্গগুলি ছোট ছোট কুন্দ ফুলের মত। আর তুষার-ধবল রংটি শ্বেত-করবী ও দ্রোণ পুষ্পের মত সাদা।