ছিলাম, নীচেকার ডেকে একজন গরিব চীনেম্যান তখন অতি সুমধুর স্বরে বাঁশী বাজাইতেছিল। সকলে তাকে ঘিরে বসেছে। স্ত্রীলোকেরা দূরে থেকে তন্ময় হ’য়ে শুনছেন। সে ঘাড় বাঁকিয়ে বাঁশীতে ফুৎকার দিয়ে কত রকমেরই সুর বার কছিল। বাঁশীর স্বর যেন কাঁদকাঁদ স্বরের মত। আর এত সুস্পষ্ট, ঠিক যেন কে কার নাম ধ’রে ডাকচে। তখন সন্ধ্যার আঁধার ঘিরে আসছিল। আর সুদূর আকাশের এক প্রান্তে একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র যেন দেহ ছাড়া আত্মার মত জ্বলছিল।
একটি ভদ্রবংশীয়া ক্যাণ্টিনবাসিনী রমণী একটি দুগ্ধপোষ্য শিশু লইয়া একাকী যাইতেছিলেন। তাঁহার অঙ্গ ক্ষীণ ও মুখের ভাব অত্যন্ত মধুর। ছেলেটিকে নানা রংএর একখানি কাপড় দিয়া পিঠে বাঁধিয়া পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হইয়া তিনি ডেকের এক প্রান্তে থাকিতেন। ছেলেটির গায়ে একটু ময়লা বা মাটীর দাগ দেখিতে পারিতেন না। এদিকে তাঁহার এত সাজসজ্জা, কিন্তু মনে বিলাসের লেশমাত্র নাই। লোকের দৃষ্টি আকর্ষণ করিবার প্রয়াস কিছুমাত্র ছিল না। সুসজ্জিতা অন্য জাতীয় স্ত্রীলোকে এরূপ প্রায় দেখা যায় না। যখন তাহার দিকে দেখিতাম, চোখ সহজে ফিরিত না। একদিন চেয়ে দেখছি এমন সময় নির্ব্বাক চাহনীতে রমণী আমার স্থির দৃষ্টিকে তিরস্কার ক’য়ে যেন আমার ঘাড় হেট করে দিলেন। এইরূপে বিষম তিরস্থত হ’য়ে অন্য দিকে চোখ ফিরিয়ে মনে মনেই বলিলাম-“টিশি! তোমায় দেখি নাই। যাহার “অনিন্দ্য-সুন্দর-মাধুর” ক্ষীণ গঠন তোমার গঠনেরই কতকটা সদৃশ ছিল, যাহার ছায়া আর এ নশ্বর সংসারে পড়িবে না, তাঁহারই কথা ভাবতে ভারতে তোমার দিকে চেয়েছিলাম।”
এবার একটি বিপত্নীক চীনেম্যানের কথা বলিয়াই এ সুদীর্ঘ প্রবন্ধ শেষ করিব। হংকং হইতে যখন প্রথম জাহাজে উঠিলেন তখনই তাঁহাকে দেখে আমার মনে হয়েছিল যে তাঁহাতে নিশ্চয়ই কিছু বিশেষত্ব আছে।