সেদিন সন্ধ্যাবেলায় রাজলক্ষ্মী বিপন্নভাবে আসিয়া কহিলেন, “মহিন, বিপিনের বউ যে বাড়ি যাইবে বলিয়া ধরিয়া বসিয়াছে।”
মহেন্দ্র কহিল, “কেন মা, এখানে তার কি অসুবিধা হইতেছে।”
রাজলক্ষ্মী। অসুবিধা না। বউ বলিতেছে, তাহার মতো সমর্থ বয়সের বিধবা মেয়ে পরের বাড়ি বেশিদিন থাকিলে লোকে নিন্দা করিবে।
মহেন্দ্র ক্ষুদ্ধভাবে কহিল, “এ বুঝি পরের বাড়ি হইল।”
বিহার বসিয়াছিল; মহেন্দ্র তাহার প্রতি ভর্ৎসনাদৃষ্টি নিক্ষেপ করিল।
অনুতপ্ত বিহারী ভাবিল, ‘কাল আমার কথাবার্তায় একটু যেন নিন্দার আভাস ছিল; বিনোদিনী বোধ হয় তাহাতেই বেদনা পাইয়াছে।’
স্বামী স্ত্রী উভয়ে মিলিয়া বিনোদিনীর উপর অভিমান করিয়া বসিল।
ইনি বলিলেন, “আমাদের পর মনে কর, ভাই!”
উনি বলিলেন, “এতদিন পরে আমরা পর হইলাম!”
বিনোদিনী কহিল, “আমাকে কি তোমরা চিরকাল ধরিয়া রাখিবে, ভাই।”
মহেন্দ্র কহিল, “এত কি আমাদের স্পর্ধা।”
আশা কহিল, “তবে কেন এমন করিয়া আমাদের মন কাড়িয়া লইলে।”
সেদিন কিছুই স্থির হইল না। বিনোদিনী কহিল, “না ভাই, কাজ নাই, দুদিনের জন্য মায়া না বাড়ানোই ভালো।”
বলিয়া ব্যাকুল চক্ষে একবার মহেন্দ্রের মুখের দিকে চাহিল।
পরদিন বিহারী আসিয়া কহিল, “বিনোদ-বোঠান, যাবার কথা কেন বলিতেছেন। কিছু দোষ করিয়াছি কি— তাহারই শাস্তি?”
বিনোদিনী একটু মুখ ফিরাইয়া কহিল, “দোষ আপনি কেন করিবেন, আমার অদৃষ্টের দোষ।”
বিহারী। আপনি যদি চলিয়া যান তো আমার কেবলই মনে হইবে, আমারই উপর রাগ করিয়া গেলেন।
বিনোদিনী করুণ চক্ষে মিনতি প্রকাশ করিয়া বিহারীর মুখের দিকে চাহিল; কহিল, “আমার কি থাকা উচিত হয়, আপনিই বলুন-না।”
বিহারী মুশকিলে পড়িল। থাকা উচিত, এ কথা সে কেমন করিয়া বলিবে। কহিল, “অবশ্য আপনাকে তো যাইতেই হইবে, না-হয় আর দু-চারদিন থাকিয়া গেলেন, তাহাতে ক্ষতি কী।”
বিনোদিনী দুই চক্ষু নত করিয়া কহিল, “আপনারা সকলেই আমাকে থাকিবার