পাতা:ছন্দ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২০৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিহারীলালের ছন্দ
১৭৭

চাঁচর চিকুর নীরদ-মালিকা
লুটায়ে পড়েছে ধরণী ’পরে।

এ-ছন্দ নারীবর্ণনার উপযুক্ত বটে, ইহাতে তালে তালে নূপুর ঝংকৃত হইয়া উঠে। কিন্তু এ-ছন্দের প্রধান অসুবিধা এই যে, ইহাতে যুক্ত-অক্ষরের স্থান নাই। পয়ার ত্রিপদী প্রভৃতি ছন্দে লেখকের এবং পাঠকের অনেকটা স্বাধীনতা আছে। অক্ষরের মাত্রাগুলিকে কিয়ৎপরিমাণে ইচ্ছামতো বাড়াইবার কমাইবার অবকাশ আছে।[১] প্রত্যেক অক্ষরকে একমাত্রার স্বরূপ গণ্য করিয়া একেবারে একনিশ্বাসে পড়িয়া যাইবার আবশ্যক হয় না। দৃষ্টান্তের দ্বারা আমার কথা স্পষ্ট হইবে।

হে সারদে দাও দেখা,
বাঁচিতে পারিনে একা,
কাতর হয়েছে প্রাণ, কাতর হৃদয়;
কি বলেছি অভিমানে
শুনো না শুনো না কানে,
বেদনা দিও না প্রাণে ব্যথার সময়।

ইহার মধ্যে প্রায় যুক্ত-অক্ষর নাই। নিম্নলিখিত শ্লোকে অনেকগুলি যুক্তাক্ষর আছে, অথচ উভয় শ্লোকই সুখপাঠ্য এবং শ্রুতিমধুর।

পদে পৃথ্বী, শিরে ব্যোম,
তুচ্ছ তারা সূর্য সোম,
নক্ষত্র নখাগ্রে যেন গনিবারে পারে;
সমুখে সাগরাম্বরা
ছড়িয়ে রয়েছে ধরা,
কটাক্ষে কখন যেন দেখিছে তাহারে।

 এই দুটি শ্লোকই কবির রচিত ‘সারদামঙ্গল’ হইতে উদ্ধৃত। এক্ষণে ‘বঙ্গসুন্দরী’ হইতে দুইটি শ্লোক উদ্ধৃত করিয়া তুলনা করা যাক।

একদিন দেব তরুণ তপন
হেরিলেন সুরনদীর জলে,
অপরূপ এক কুমারীরতন
খেলা করে নীল নলিনীদলে।

  1. তুলনীয়: পদ্মার ছন্দের বিশেষ গুণ...বাড়ানো-কমানো যায় পৃ ১২০।