পাতা:ছন্দ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৬৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৪০
ছন্দ

চলার ছন্দ। ছন্দশাস্ত্রেও ছন্দ কথাটি প্রসঙ্গভেদে অন্তত তিনটি বিভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়। প্রথমত, পদ্যরচনার বিশেষ রীতি বা পদ্ধতি। যেমন—সাধু- বা সংস্কৃত-বাংলার ছন্দ, প্রাকৃত-বাংলার বা ছড়ার ছন্দ। দ্বিতীয়ত, ছন্দ মানে স্পন্দ বা rhythm। যেমন—সম ও অসম চলনের ছন্দ, চার মাত্রার ছন্দ। গদ্য-ছন্দ বলতেও গদ্যের স্পন্দ বা রিদ্‌ম্‌ই বোঝায়। যে গদ্যে সুস্পষ্ট স্পন্দ অনুভূত হয় তাকেই বলা যায় ছন্দোময় গদ্য। তৃতীয়ত, ছন্দ মানে পদ্য রচনার বন্ধ বা পদসমাবেশ। যেমন— পয়ার, ত্রিপদী, অমিত্রাক্ষর, মন্দাক্রান্তা। সংকীর্ণার্থে ছন্দ শব্দটি পদ্যরচনার রীতি, স্পন্দ ও বন্ধ এই তিনের যে-কোনো একটিকে বোঝাতে পারে, ব্যাপকার্থে ওই তিনের সমষ্টিকেই বোঝায়। দ্রষ্টব্য ১১৫ পৃষ্ঠা পাদটীকা ১ এবং ‘লয়’ শব্দের সংজ্ঞাপরিচয়।

 ঝাঁপতাল—দ্রষ্টব্য ‘তাল’।

 ঝুল্লণা (পৃ ১০৯)—প্রাকৃত মাত্রাবৃত্ত রীতির একটি ছন্দোবন্ধের নাম ঝুল্লণা। ঝুল্লণা দুই ‘রূপকল্প’ বা পংক্তি নিয়ে গঠিত। প্রতিপংক্তিতে তিন পদ; প্রথম ও দ্বিতীয় পদে দশ কলামাত্রা এবং তৃতীয় পদে সতর কলামাত্রা। যতিও তিনটি; প্রথম ও দ্বিতীয় পদের পরে অর্ধযতি, তৃতীয় পদের পরে পূর্ণযতি। প্রাকৃতপৈঙ্গল গ্রন্থে প্রদত্ত ঝুল্পণার বর্ণনাটিও এই ছন্দেই রচিত। ঝুল্লণার বাংলা প্রতিরূপ এই—

আজি রাতের যে ফুলগুলি
জীবনে মম উঠিল দুলি
ঝরুক তারা কালি প্রাতের ফুলেরে দিতে প্রাণ।

—বীথিকা, মরণমাতা

 তাল[১]— গানের সুরপ্রবাহের গতিসাম্য রক্ষার জন্যে কালপরিমাপের যে ব্যবস্থা, তাকেই বলা হয় তাল। এই ব্যবস্থা অনুসারে গীতকালকে

  1. এই অংশটি প্রধানত কৃষ্ণধন বন্দ্যোপাধ্যায় -কৃত ‘গীতসূত্রসার’ অবলম্বনে রচিত।