পাতা:ছন্দ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৬৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৪২
ছন্দ

 দাদরা— এটি একতালার মতোই একটি ত্রিমাত্রক বিভাগের তাল। প্রধান পার্থক্য এই যে, একতালায় চার বিভাগ ও মোট মাত্রাসংখ্যা বার, কিন্তু দাদরার দুই বিভাগ ও মোট মাত্রাসংখ্যা ছয়। দাদরার লয় দ্রুত।

 ধামার— চোদ্দ মাত্রার তাল। এই তালের তিন বিভাগ এবং এর মাত্রাবিন্যাসপদ্ধতি হচ্ছে পাঁচ-পাঁচ-চার।

 বনের পথে পথে | বাজিছে বায়ে ইত্যাদি দৃষ্টান্তটির (পৃ ২৬) তালবিভাগ হচ্ছে তিন-দুই-দুই+তিন-দুই। সুতরাং এটি স্পষ্টতই চৌতাল, একতালা, ধামার বা ঝাঁপতালের পর্যায়ে পড়ে না। বস্তুত এটি একটি নূতন তাল।

 এই হল ‘তাল’ শব্দের সংগীতশাস্ত্রসম্মত পারিভাষিক অর্থ। এই অর্থে তাল শব্দের দ্বারা কয়েকটি কালপর্ব বা তালবিভাগ নিয়ে গঠিত সমগ্র পংক্তির পূর্ণরূপ বোঝায়। এ ছাড়াও তাল শব্দের একটি অপারিভাষিক সাধারণ অর্থ আছে। এই অর্থে তাল মানে রিদ্‌ম্ বা ‘ছন্দঃস্পন্দন’। যেমন, ‘তিনমাত্রার তাল’ (পৃ ২১৭) মানে তিন মাত্রার স্পন্দবিভাগ বা উপপর্ব। দ্রষ্টব্য ‘লয়’।

 তিনমাত্রার ছন্দ—যে ছন্দের উপপর্ব বা ‘চলন’ তিনমাত্রা-পরিমিত তাকে বলা হয়েছে তিনের ছন্দ (পৃ ৩৬), তিনের মাত্রার ছন্দ (পৃ ৪৪), ত্রৈমাত্রিক ভূমিকার ছন্দ (পৃ ৫৪), ত্রৈমাত্রিক ছন্দ (পৃ ৬৭), তিনমাত্রার ছন্দ (পৃ ৭৩) বা তিন য়ুনিটের ছন্দ (পৃ ২১৩)। এরই অপর নাম অসম ছন্দ। অর্থাৎ ছয়মাত্রা পর্বের ছন্দকেই রবীন্দ্রনাথ বলতেন তিনমাত্রার ছন্দ।

 বিশেষভাবে লক্ষ্য করবার বিষয় এই যে, রবীন্দ্রনাথ দুই প্রকৃতির দুটি বিভিন্ন ছন্দকে তিনমাত্রার ছন্দ নামে অভিহিত করেছেন। তিনমাত্রার ছন্দ মানে তিনমাত্রা-উপপর্বের ছন্দ। মাত্রাবৃত্তবর্গের ছয়মাত্রাপর্বের ছন্দে প্রতিউপপর্বে থাকে তিন মাত্রা (পৃ ৭৩)। যথা—