সংকুচিত করবার এই যে অবকাশ, তাকেই বলা হয়েছে ‘ফাঁক’। আর, যুগ্মধ্বনিকে একমাত্রা-পরিমাণের মধ্যে সংকুচিত করে আনবার এই যে শক্তি, তাকেই বলা হয়েছে ‘শোষণশক্তি’।
এই সম্বন্ধে রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, পয়ারের পদক্ষেপ যেখানে ঘন ঘন, সেখানে এই শোষণশক্তির প্রয়োগ চলে না (পৃ ১১, ৩৮)। দৃষ্টান্ত দিয়ে বলেছেন, “যদি লেখা যায়
ধরিত্রীর চক্ষুনীর মুঞ্চনের ছলে
কংসারির শঙ্খরব সংসারের তলে।
তা হলে ও একটা স্বতন্ত্র ছন্দ হয়ে যায়” (পৃ ৩৯)। এই দৃষ্টান্তটিকে তিনি পাঁচমাত্রা-পর্বের মাত্রাবৃত্ত বলে ধরে নিয়েছেন, অর্থাৎ এখানে সবগুলি যুগ্মধ্বনিই প্রসারিত ও দ্বিমাত্রক। কিন্তু এটিকে সাধারণ পয়ারের কায়দায়ও পড়া যায়, অর্থাৎ শব্দের আদি- ও মধ্য-স্থিত যুগ্মধ্বনিগুলিকে সংকুচিত করে এই পংক্তিটিকে চোদ্দ মাত্রার সাধারণ পয়ার বলেও গণ্য করা যায়। রবীন্দ্রকাব্যেও তার প্রমাণ আছে।—
সমুদ্রের তরঙ্গের কলধ্বনি সম।
—মেঘদুত, মানসী
এ সুন্দর অরণ্যের পল্লবের স্তরে।
—বসুন্ধরা, সোনার তরী
দুটোই পয়ারপংক্তি, তার ঘন ঘন পদক্ষেপও সুস্পষ্ট। অবশ্য এ দুটিকে পাঁচমাত্রা-পর্বের ভঙ্গিতেও পড়া যায়। ঘন ঘন পদক্ষেপওয়ালা পয়ারও যে যুগ্মধ্বনির বোঝা সইতে পারে, এ কথা রবীন্দ্রনাথ নিজেই স্বীকার করেছেন অন্যত্র (পৃ ৬৮, ৭০)। যথা—
বেণীবন্ধ তরঙ্গিত কোন্ ছন্দ নিয়া।
এবং
তর্ক-যুদ্ধে উগ্র তেজ, শেষ যুক্তি গালি।