পাতা:ছন্দ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩০৬
ছন্দ

 রবীন্দ্রনাথের সামনে নাগাষ্টকংএর আদর্শ ছিল না। তাই তিনি মাত্রাবিভাজনের তথা মিলস্থাপনের ব্যাপারে অন্য আদর্শ গ্রহণ করেছেন। এই প্রসঙ্গে আরও স্মরণীয় যে, সংস্কৃত-ভাঙা ছন্দ রচনার কাজে দ্বিজেন্দ্রনাথ মেনেছিলেন অক্ষরমাত্রা, আর এই আদর্শে ‘লজ্জা’ শব্দে দুই মাত্রা; কিন্তু রবীন্দ্রনাথ মানতেন কলামাত্রা, এবং কলামাত্রার বিচারে ‘লজ্জ৷’ শব্দে তিন মাত্রা গণনীয়।

 শিখরিণী ছন্দের প্রসঙ্গে স্বপ্নপ্রয়াণ কাব্যের

    
বৃক্ষগণ হেলিত সুশীতল সমীরণে।
    
পুষ্প যত প্রস্ফুটিত পুষ্পময় কাননে।

ইত্যাদি শেষ শ্লোকটির কথাও বলা প্রয়োজন। উক্ত কাব্যের তৃতীয় সংস্করণে (১৯১৪) এই শ্লোকটি সংস্কৃত শিখরিণী ছন্দে রচিত বলে বর্ণিত হয়েছে। বলা বাহুল্য এটি শিখরিণী ছন্দ নয়। এই ভ্রান্ত বর্ণনার দায়িত্ব কার জানি না। স্বপ্নপ্রয়াণ কাব্যের প্রথম সংস্করণেও (১৮৭৫) এই শ্লোকটি ছিল, কিন্তু তার ছন্দপরিচয় দেওয়া ছিল না। আসলে এটি রচিত হয়েছে সংস্কৃত ‘নিশিপালক’ ছন্দে। লঘুগুরুক্রমে এ ছন্দের ধ্বনিবিন্যাস হচ্ছে এ-রকম।—

— ৴ ৴ ৴,— ৴ ৴ ৴,— ৴ ৴ ৴,— ৴ —

 সমমাত্রার ছন্দ (পৃ ১৫)— দুইমাত্রার উপপর্বকে রবীন্দ্রনাথ বলেছেন সমচলন বা সমমাত্রার চলন (পৃ ৩৫) এবং সমমাত্রা-চলনের ছন্দকেই তিনি নাম দিয়েছেন সমমাত্রার ছন্দ (পৃ ৩৬-৩৭)। সমমাত্রার চলনকে অন্যত্র বলা হয়েছে সমমাত্রার চাল (পৃ ৭৪) বা দ্বিপদীর চাল (পৃ ১১৮)। আর সমমাত্রার ছন্দকে পরিচয় দিয়েছেন ‘পয়ারজাতীয়’ বলে (পৃ ২১৫); কারণ পয়ারের উপপর্ব গঠিত হয় দুই মাত্রা নিয়ে।