পাতা:ছন্দ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সংজ্ঞাপরিচয়
৩০৭

এইজন্য পয়ারজাতীয় বা সমমাত্রার ছন্দকে ‘দুইমাত্রার ছন্দ’ নামও দেওয়া হয়েছে (পৃ ৩৮)।

 রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, দুইমাত্রার ছন্দের অর্থাৎ সমমাত্রার ছন্দের একটি অসাধারণ শক্তি বা মহদ্‌গুণ আছে। সে হচ্ছে তার ‘শোষণশক্তি’ (পৃ ৩৮)। একেই অন্যত্র বলা হচ্ছে ‘ভারবহনশক্তি’ (পৃ ১২১)। তাই এ ছন্দের একটি বিশেষণ ‘গুরুভারবহ’ (পৃ ৬৯)। শোষণশক্তি হচ্ছে আসলে সংকোচনশক্তি। যুগ্মধ্বনি অর্থাৎ রুদ্ধদলকে সংকুচিত করে আনবার অসাধারণ শক্তিকেই বলা হয়েছে শোষণশক্তি। যেমন—

সংগীত, তরঙ্গি উঠে | অঙ্গের্ উচ্ছ্বাসে

এখানে সং, রঙ্‌ অঙ্‌ উচ্ এই চারটি রুদ্ধদল সংকুচিত হয়েছে (পৃ ৩৮)। তাই এগুলির মূল্য এক মাত্রা। সংকুচিত না হলে প্রত্যেকটির মূল্য হত দুই মাত্রা। সংস্কৃত ছন্দের নিয়মে ‘চন্দনচর্চিত শব্দটা অক্ষরগণনায় [বস্তুতঃ কলাগণনায়] আট মাত্রা’ (পৃ ১২১)। কিন্তু বাংলা সমমাত্রার ছন্দে অর্থাৎ দুইমাত্রা-উপপর্বের ছন্দে এটা অনেক সময়ই ছয় মাত্রা বলে গণ্য হয়। অর্থাৎ চন্ ও চর্ দল-দুটি সংকুচিত হয়ে একমাত্রার স্থান নেয়। ফলে ছয় মাত্রার পরিধির মধ্যেই ঠাসাঠাসি করে আট মাত্রার স্থান সংকুলান হয়। যেমন—

চন্দনচর্চিত তার | নীলবর্ণ অঙ্গখানি |
কণ্ঠে শোভে বনপুষ্প | মালা।

এখানে প্রত্যেক পূর্ণ বিভাগে আছে আট মাত্রা এবং প্রত্যেকটিতেই দুটি করে যুগ্মধ্বনি (মানে রুদ্ধদল) সংকুচিত হয়ে এক মাত্রার স্থান পেয়েছে। ‘চন্দনচর্চিত’ ছয় মাত্রা ৷

 ‘কিন্তু দুইমাত্রার ছন্দ মাত্রেরই যে এই রকম অসাধারণ শোষণশক্তি’ তা বলা যায় না (পৃ ৩৮)। উপরের দৃষ্টান্ত-দুটিকেই একটু বদলে দেওয়া যাক।—