8ፃ বোলপুর । শনিবার। ৯ জ্যৈষ্ঠ ১৮৯২ কাল যে ঝড় সে আর কী বলব। আমার ‘সাধনা’র নিত্যনৈমিত্তিক লেখা সেরে চা খাবার জন্তে উপরে যাচ্ছি, এমন সময়ে প্রচণ্ড ঝড় এসে উপস্থিত। ধুলোয় আকাশ আচ্ছন্ন হয়ে গেল এবং বাগানের যত শুকনো পাতা একত্র হয়ে লাটিমের মতো বাগানময় ঘুরে ঘুরে বেড়াতে লাগল ; যেন অরণ্যের যত প্রেতাত্মাগুলো হঠাৎ জেগে উঠে ভূতুড়ে নাচন নাচতে আরম্ভ করে দিলে। বাগানের সমস্ত গাছপালা পায়ে শিকলি-বাধা প্রচণ্ড জটায়ুপাখির মতো ডানা আছড়ে ঝটুপটু ঝটুপটু করতে লাগল। সে কী গর্জন, কী মাতামাতি, কী একটা লুটোপুটি ব্যাপার। ঝড়টা দেখে আমার মনে পড়ছিল, আমেরিকার ranch সম্বন্ধে মাঝে মাঝে যেরকম বর্ণনা পড়া যায়— হঠাৎ কোনো একটা বেড়া ভেঙে ফেলে ছ-সাত শো বুনো ঘোড়া ধুলো উড়িয়ে উর্ধ্বশ্বাসে ছুটে পালাচ্ছে, আর তার পিছনে পিছনে তাদের তাড়িয়ে ফিরিয়ে আনবার জন্যে বড়ো বড়ো ফঁাস হাতে অনেকগুলো অশ্বারোহী ছুটেছে ; মাঝে মাঝে যেখানে যাকে পাচ্ছে সাই সাই শব্দে দিচ্ছে চাব কে— বোলপুরের অবারিত আকাশ এবং মাঠের মধ্যে যেন সেই রকমের একটা উচ্ছঙ্খল পলায়ন এবং পশ্চাদ্ধাবন চলছে—দৌড় দৌড় ধর-ধর পালা-পালা’ হুড়-মুড় ছড়-দাড় ব্যাপার। SS o