পাতা:ছিন্নপত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৮০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পতিসার, ২৭শে ফেব্রুয়ারি, ১৮৯৪ মাঝে মাঝে মেঘ করচে—মাঝে মাঝে পরিষ্কার হয়ে যাচে—থেকে থেকে হঠাৎ হুহু করে একটা হাওয়া এসে আমার বোটের গ্রন্থিতে গ্রন্থিতে বিচিত্র ক্যা কোঃ শব্দে আৰ্ত্তনাদ তুলচে আজ দুপুর বেলাটা এমনি ভাবে চলচে — এখন বেলা একটা বেজেছে—পাড়াগেয়ে মধ্যাঙ্কুের এই হাসের ডাক, কাপড় কাচার শব্দ, নৌকো চলাচলের ছল ছল ধ্বনি, দূরে গোরুর পাল পার করবার হৈ হৈ রব, এবং আপনার মনের ভিতরকার একটা উদাস আলস্তপূর্ণ স্বগত সঙ্গীতস্বর কলকাতার চৌকিটেবিলসমাকীর্ণ বর্ণ বৈচিত্র্যবিহীন নিত্যনৈমিত্তিকতার মধ্যে কল্পনাও করতে পারিনে। কলকাতাটা বড় ভদ্র এবং বড় ভারি, গবর্মেন্টের আপিসের মত । জীবনের প্রত্যেক দিন টাই যেন একই আকারে একই ছাপ নিয়ে টাকশাল থেকে তক্তকে হয়ে কেটে কেটে বেরিয়ে আসচে–নীরস মৃত দিন ; কিন্তু খুব ভদ্র এবং সমান ওজনের । এখানে আমি দলছাড়া—এবং এখানকার প্রত্যেক দিন আমার নিজের দিন–নিত্যর্নিয়মিত দম-দেওয়া কলের সঙ্গে কোনো যোগ নেই। আমার আপনার মনের ভাবনাগুলি এবং অখণ্ড অবসরটিকে হাতে করে নিয়ে মাঠের মধ্যে বেড়াতে যাই—সময় কিম্বা স্থানের মধ্যে কোনো বাধা নেই। সন্ধোটা জলে স্থলে আকাশে ঘনিয়ে আসতে থাকে— আমি মাথাটা নীচু করে আস্তে আস্তে বেড়াতে থাকি ।