পাতা:ছিন্নমুকুল - স্বর্ণকুমারী দেবী.pdf/১০২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১০০
ছিন্নমুকুল

 যামিনী অনেক বলিয়া কহিয়াও ইহাতে তাহাকে রাজি করাইতে পারিলেন না, যামিনীনাথের বিশেষ পীড়াপীড়িতে শেষে প্রমোদ বলিলেন—

 “হিরণের বিরুদ্ধে তো তেমন প্রমাণ কিছুই নেই, কি বলেই বা নালিশ করব? তার হাতে পিস্তল দেখেছি এই যা বলবার কথা, তা তো সে অস্বীকার করতে পারে।”

 যা। প্রমাণ বিশেষ না থাকলে শাস্তি না হতে পারে, কিন্তু খুনের দাবীতে তাকে কোর্টে যেতে হলেই বিলক্ষণ অপমান।”

 প্রমোদ বলিলেন “না তাতে আর কাজ নেই। তাতে তারও অপমান আমারো। বিশেষ আমি যদি হেরে যাই তাহলে মহা লজ্জার কথা। হিরণকে চিনে রইলুম এই যথেষ্ট।”

 কোনমতে না পারিয়া অগত্যা যামিনী সে চেষ্টা হইতে ক্ষান্ত হইলেন। তখন ক্রমে অন্যান্য কথা আসিয়া পড়িল। প্রমোদের মনের ইচ্ছা নীরজার কথা পাড়েন, কিন্তু সে কথা কহিতে গেলেই আপনা হইতে যেন মুখ বন্ধ হইয়া যায়, লজ্জা সঙ্কোচ আদি কত কি ভাব আসিয়া তাঁহার ইচ্ছার উপর আধিপত্য করে। নীরজার সহিত দেখা করিবার অভিপ্রায়ে ইতিমধ্যে তিনি আর একদিন সন্ধ্যাকালে এখানে আসিয়াছিলেন কিন্তু যামিনী গৃহে না থাকায় তাঁহাকে হতাশ হইয়া ফিরিয়া যাইতে হয়। সে কথাও প্রমোদ যামিনীর নিকট তুলিতে পারিলেন না। আসল কথা তাহার অন্তরাত্মা তাঁহার মনের নিভৃত বিজনে গোপনে বলিতেছিল—“যামিনী নীরজাকে উদ্ধার করিয়াছে—নীরজা যামিনীরই প্রাপ্য—তাহাতে তোমার কোন অধিকারই নাই, তাহাকে যদি ভালবাস ত মনে মনে নীরবে ভালবাস—সে কথা প্রকাশ করিও না।” কিছুক্ষণ পরে প্রমোদ কহিলেন—