পাতা:ছিন্নমুকুল - স্বর্ণকুমারী দেবী.pdf/১২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১২২
ছিন্নমুকুল

দেখিতে সেই আলোকটিকে আর দেখিতে পাইল না,এই অন্ধকার জলরাশির মধ্যে যে একটি আলোক ছিল, তাহাও যেন নিবিয়া গেল। কনকের সংসার সমুদ্রের মধ্যে সুশীলা যে একটি আলো ছিলেন তাহাও এইরূপ নিবইয়া গিয়াছে, কনক এখন আর কাহার স্নেহে বাঁচিবে? কনক যাতনায় মনে মনে ঈশ্বরকে স্মরণ করিতে করিতে ব্যাকুল ভাবে ঊর্দ্ধদৃষ্টি করিল। দেখিল সেই অনন্ত আকাশ কেমন নীরব, কেমন গম্ভীর, কেমন শোভাময়। মনে হইল যেন তাহার দুঃখে তারাগণ ভ্রূকুটী করিয়া হাসিতেছে। সহসা সেই তারকারাশির মধ্য হইতে একটি তারকা খসিয়া পড়িল। কনকের মনে হইল এই যে তারাটি খসিল, এই অসংখ্য তারকার মধ্যে একটি খসিয়া গেল, উহার জন্য কাহার কি আসিবে যাইবে? একটি কমিয়াছে বলিয়া কেহ কি জানিতেও পারিবে? এখানেই বা আমি কে? এই বিস্তৃত পৃথিবী—তাহার মধ্যে আমি কে? আমি একটি অণুকণা হইতেও অধম। আমি খসিয়া পড়িলে কাহার কি ক্ষতিবৃদ্ধি? আমার জন্য একবিন্দু অশ্রু ফেলিবারও কেহই নাই। ব্যথিত কাতর কনক ভাবিতে ভাবিতে, অন্যমনে একটি একটি করিয়া সোপানশ্রেণী অবতরণ করিতে লাগিল। ক্রমে কখন্ যে সোপান গুলি ফুরাইয়া আসিল কনকের আর তাহাতে হুঁস হইল না, শেষ সোপানে নামিয়া যেমন আর একটি সোপানের প্রত্যাশায় সে পা বাড়াইল, অমনি সোপানচ্যুত হইয়া গভীর জলগহ্বরে নিপতিত হইল, দেখিতে দেখিতে গঙ্গার কৃষ্ণকায়ার মধ্যে কোথায় ভাসিয়া গেল; দুই একটি বিম্ব ব্যতীত গঙ্গার বিপুল বক্ষে কনকের আর কোন চিহ্নই রহিল না, ক্ষণপরে সে চিহ্নও লুপ্ত হইল। দাসী চীৎকার করিয়া কাঁদিতে কাঁদিতে উপরে উঠিয়া আসিল।