পাতা:ছিন্নমুকুল - স্বর্ণকুমারী দেবী.pdf/১৫১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
একত্রিংশ পরিচ্ছেদ
১৪৯

 প্রমোদ আবার বলিলেন, “কেন বিবাহ করবি নে আমাকে বুঝিয়ে দে, তোর আপত্তি কিসে?”

 বালিকাকে নিরুত্তর দেখিয়া উত্তরোত্তর অধিকতর ক্রুদ্ধ হইয়া উচ্চৈঃস্বরে বারবার করিয়া ঐ এক কথাই জিজ্ঞাসা করিতে লাগিলেন। প্রমোদ স্বভাবতঃ উদ্ধত এবং চিত্তদমনে অপটু, মনের বেগ অনুসারেই কার্য্য করিতে অভ্যস্ত, ভগিনীকে এই প্রকার নিরুত্তর দেখিয়া সরোষে টেবিলে আঘাত করিয়া আবার বলিলেন,—

 “কেন বিবাহ করবে না বল।”

 বালিকা ভীত কম্পিত হইয়া পড়িল, তাহার মস্তক ঘুরিতে লাগিল, কি উত্তর দেওয়া উচিত, কি অনুচিত, তাহা ভাবিবার ক্ষমতাও রহিল না। হৃদয়ের অভ্যন্তর হইতে সেই একই উত্তর ধ্বনিত হইয়া উঠিল— “আমার বিয়ে করতে ইচ্ছা নেই।”

 “তোমার ইচ্ছা! বাঙ্গালীর মেয়েদের আবার বিবাহে ইচ্ছা অনিচ্ছা কি? তোর ইচ্ছার উপর বিবাহের কি নির্ভর করছে? আমার ইচ্ছাই কি যথেষ্ট নয়?”

 বালিকা আর উত্তর দিতে পারিল না। যে উত্তর দিয়া ফেলিয়াছে, তাহাতেই যেন অপ্রতিভ হইয়া পড়িল, শুষ্ক ওষ্ঠাধর ঘন ঘন কাঁপিতে লাগিল—বিশাল চক্ষুর শূন্যদৃষ্টি শূন্যেই সংলগ্ন হইল। তখন প্রমোদ ক্রোধকম্পিত হইয়া উচ্চৈঃস্বরে বলিলেন,

 “আমার ইচ্ছাই যথেষ্ট, আমি যে তোর ইচ্ছা জিজ্ঞাসা করেছিলেম সে অনুগ্রহ মাত্র। তোর ইচ্ছা শুনতে চাই না, আমার ইচ্ছাতেই তোর বিবাহ করতে হবে।”

 তখন বালিকা যেন কোন দৈব শক্তিতে উত্তেজিত হইয়া, যেন নিরাশার অপ্রতিহত তেজে উত্তেজিত হইয়া বলিল,