পাতা:ছিন্নমুকুল - স্বর্ণকুমারী দেবী.pdf/১৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দ্বাত্রিংশ পরিচ্ছেদ
১৫৫

  বালিকা কোন উত্তর করিল না, কেবল তাহার নীরব মুখকান্তিতে সুদারুণ একটা উদ্বেগ প্রকটিত হইল। প্রমোদ সন্দিগ্ধ হইয়া গম্ভীর ভাবে কহিলেন, “আমি ত তোরি মনের কথা লিখছি। এই একটু আগে তুই বলেছিস্ বিয়ে করতে তোর ইচ্ছা নেই। তখন আমি তাতে অসন্তুষ্ট হয়েছিলুম সত্যি, কিন্তু এখন আমি তোর সঙ্গে পূর্ণভাবে একমত হয়েই এ প্রস্তাব অগ্রাহ্য করছি, তাহলে কেন তোর এ বিষণ্ণ ভাব?”

 কনক পাষাণ-প্রতিমাবৎ নিরুত্তর; চক্ষে স্থির দৃষ্টি, তাহাতে পলক নাই, জ্যোতি নাই, বদনমণ্ডল পাংশুবর্ণ, হৃদয়ে রক্ত-স্রোত বহিতেছে কি না সন্দেহ। কনকের ভাব দেখিয়া প্রমোদ এবার বিরক্তির ভাবে বলিলেন, “কনক কথা কও না; চুপ করে রইলে যে?”

 কনক কি যেন বণিতে চেষ্টা করিল, কিন্তু কথা আটকিয়া গেল, বলিতে পারিল না। প্রমোদ উত্তরের আশায় অনেক ক্ষণ তাহার মুখের দিকে চাহিয়া চাহিয়া শেষে বিরক্ত হইয়া বলিলেন,

 “কনক তুমি দেখছি আমাকে পাগল ক’রে তুলবে? এই এখনি একটু আগে দৃঢ়ভাবে বিবাহে অনিচ্ছা প্রকাশ করলে, এখন আবার কথা কইতে কি হ'ল, বিবাহ করবে না কি? আমাকে উত্তর দেও।”

 বালিকা ভয়ে ভয়ে ধীরে ধীরে মুখ খুলিল, কিন্তু সুস্পষ্ট স্বরে কহিল, “আমার অমত নেই।” কাল কনক কোন মতেই যামিনীনাথের সহিত বিবাহে সম্মত হইল না, আর আজ তাহার হিরণকে বিবাহ করিতে ইচ্ছা! প্রমোদের শোণিত উত্তপ্ত হইয়া উঠিল, তিনি এখন বুঝিলেন এই কারণেই তবে কনক কাল বিবাহে অসম্মত হইয়াছিল। হিরণকে তাঁহার কণ্টক স্বরূপ মনে হইল, মনে মনে তাহার উপর ভীষণ ক্রুদ্ধ হইয়া পড়িলেন।

 তিনি কম্পিত স্বরে বলিলেন,