পাতা:ছিন্নমুকুল - স্বর্ণকুমারী দেবী.pdf/১৯১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ঊনচত্বারিংশ পরিচ্ছেদ
১৮৯

দাঁড়াইল, সে আসিয়া প্রমোদকে এবং ভূপতিত ব্যক্তিকে দেখিয়া জিজ্ঞাসা করিল, “মহাশয়, আপনারা বিপদে পড়েছেন আমি চীৎকার শুনেই দৌড়ে এসেছি, কাছেই এই গাছের আড়ালে আমার কুটির, সেইখানে চলুন। আমি এ লোকটিকে উঠিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।”

 তাহাকে দেখিয়া প্রমোদ যেন প্রাণ পাইয়া তাহার সহিত একত্রে কুটিরে আসিয়া পৌঁছিলেন। কুটিরে প্রবেশ করিয়া দেখিলেন, গৃহ পার্শ্বে একটি অগ্নিপাত্র। তিনি তাহার নিকট একখানি মাদুরে নীরজাকে শয়ন করাইয়া উত্তাপ দিতে দিতে ক্রমে তাহার জ্ঞান সঞ্চার হইতে লাগিল।

 এদিকে অপর ব্যক্তি সেই আহত ব্যক্তিকে মাটীতে ফেলিয়া দেখিল, একটি পিস্তলের গুলি তাহার স্কন্ধ দিয়া চলিয়া গিয়াছে, কিন্তু বুঝিল তাহা সাংঘাতিক নহে অল্প যত্নেই সে আরোগ্যলাভ করিবে। সে ক্ষতস্থান বন্ধনে যত্নপর হইল। ইহার মধ্যে নীরজাও সজ্ঞান হইয়া উঠিয়া বসিল। তখন প্রমোদ সুস্থির হইয়া আহত ব্যক্তির দিকে দৃষ্টিপাত করিলেন। নীরজাও বসিয়া তাহার দিকে চাহিয়া দেখিল, দেখিবামাত্র সহসা চীৎকার করিয়া কাঁদিয়া উঠিল, প্রমোদও সন্ন্যাসীকে চিনিতে পারিলেন। চিনিয়া নীরজা পিতার নিকট আসিয়া ব্যাকুলভাবে তাঁহার সেবা করিতে লাগিল। ক্রমে তাঁহাদের যত্নে সন্ন্যাসী অনেকটা শান্তিলাভ করিলেন, তাঁহার কথা কহিবার সামর্থ্য জন্মিল। তখন তিনি বাগ্রতা সহকারে বলিয়া উঠিলেন,

 “তোমরা একজন কেহ এখনি পুলিষে যাও। নহিলে আজ এখনি হত্যাকাণ্ড হবে।”

 সকলে আশ্চর্য্য ভাবে তাঁহার মুখের দিকে চাহিয়া রহিল, যেন তাঁহার কথার অর্থ বুঝিতে অক্ষম। পিতাকে কথা কহিতে দেখিয়া আহ্লাদে নীরজা তাঁহার গলা জড়াইয়া ধরিয়া কাঁদিতে লাগিল। সন্ন্যাসীও