পাতা:ছিন্নমুকুল - স্বর্ণকুমারী দেবী.pdf/৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৮
ছিন্নমুকুল

আমাদের কলেজ খুলবে, কাজেই আর বেশীদিন এখানে থাকতে পাব না। কাল আমাদের কানপুর ছাড়তেই হবে। কলকাতা যা’বার আগে আমার আবার বাড়ী গিয়ে দু চার দিন থাকা চাই ত,—নইলে—”

 এই সময় নীরজা বলিয়া উঠিল—“আমার বউকথা কওটি দেখান হ’ল না—আপনি কি আর আস্‌বেন না?”

 প্রমোদ এই কথায় একটু হাসিয়া তাহার দিকে চাহিয়া রহিলেন। সন্ন্যাসীও সেই কথায় একটু হাসিলেন, কিন্তু কিছু পরেই আবার সে হাসি বিষাদরূপে পরিণত হহল, সন্ন্যাসীর মুখকান্তি গম্ভীর হইয়া পড়িল। প্রমোদ বালিকার দিকে চাহিয়া স্বগতচিন্তার অসাবধানতায় আস্তে আস্তে বলিলেন “এমন সরলা বালিকা আর কখনও দেখি নাই।”—এই কথাগুলি যদিও প্রমোদ মৃদুম্বরেই বলিয়াছিলেন, কিন্তু ইহা সন্ন্যাসীর কর্ণে প্রবেশ করিল, তিনি বলিয়া উঠিলেন “সত্য, এমন সরলা আর নাই; কিন্তু উপযুক্ত পাত্র কোথায়? যোগ্য পাত্রে অর্পণ ক’রে হরিদ্বারে যাওয়া কি আমার অদৃষ্টে ঘবে?”

 শুনিয়া নীরজা বাল্যভাব ছাড়িয়া গম্ভারভাবে বলিল, “বাবা হরিদ্বারে আমাকে সঙ্গে নিয়ে যাবে না? আমি সঙ্গে যাব। হরিদ্বার কতদূর?”

 স। “অনেক দূর।”

 “তা হোক্ অনেক দূর! আমরা যদি যাই আপনিও চলুন না আমাদের সঙ্গে বেড়িয়ে আসবেন?” শেষের কথাগুলি প্রমোদের দিকে চাহিয়া বালিকা বলিল। সন্ন্যাসী অনুসন্ধিৎসু দৃষ্টিতে নীরজার প্রতি চাহিলেন, কি ভাবে এই কথাটি তাহার অন্তঃস্থল হইতে বাহির হইল, তিনি তাহা যেন জানিতে চেষ্টা করিলেন। যে একটী ভাবে সমস্ত পৃথিবী মুগ্ধ, সমস্ত জগৎ সংসার চলিতেছে, সন্ন্যাসী দেখিতে চাহিলেন, নীরজার ঐ ব্যাকুলতা সেই ভাবের অঙ্কুর কি না? কিন্তু কিছু