পাতা:ছিন্নমুকুল - স্বর্ণকুমারী দেবী.pdf/৫০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৮
ছিন্নমুকুল

 প্রমোদ ইহার কি উত্তর দিবেন? ক্রোধে, কষ্টে, হতবুদ্ধি হইয়া দাঁড়াইয়া রহিলেন। অন্য কেহ হইলে প্রমোদের অপরিসীম ক্রোধ হইত, ক্রোধান্ধ হইয়া কি করিতেন ঠিক নাই, কিন্তু সন্ন্যাসী বলিয়া — নীরজার পিতা বলিয়া, ক্রোধ অপেক্ষা কষ্টের ভাগই অধিক হইল। তাঁহাকে নিরুত্তর দেখিয়া সন্ন্যাসী আবার বলিলেন “আবার বল্‌ছি তুমি যদি ভালয় ভালয় তাকে ফিরিয়ে দাও তো আমি তোমার সকল দোষ মার্জ্জনা করব,—”

 প্রমোদ আর মৌন হইয়া থাকিতে না পারিয়া ঈষৎ রোষগর্ব্বিত স্বরে বলিলেন “মহাশয় নীরজা কোথায় আমি জানি না, আমি শপথ করে ঈশ্বর সম্মুখে আপনাকে বলছি, এতেও যদি আপনি বিশ্বাস না করেন তো আপনার যা ইচ্ছা—”

 সন্ন্যাসী সহিষ্ণুভাবে প্রমোদের বাক্য শেষ পর্য্যন্ত আর শুনিতে পারিলেন না। রাগে কাঁপিতে কাঁপিতে বলিলেন—

 “চুপ, আর কথা না, তোমার প্রত্যেক কথায় আমার আপাদ মস্তকে অগ্নিস্ফুলিঙ্গ ছুটছে, নরাধম! পাষণ্ড! আজ দেখছি এ হস্ত তোর রক্তে গ্লাবিত হবে, আজ দেখছি নরহত্যায় এ হস্ত কলুষিত হবে।”

 বলিয়া ক্রোধে অজ্ঞানবৎ প্রমোদের দিকে দুই এক পদ অগ্রসর হইলেন, কিন্তু দুই এক পদ চলিয়াই আবার যেন জ্ঞান হইল, তিনি সহসা থমকিয়া দাঁড়াইলেন, একবার সেই সহস্র তারকাপ্রজ্জ্বলিত আকাশের দিকে চাহিয়া একবার আপনার চারিদিকে সেই নিস্তব্ধ প্রকৃতির অন্ধকার মূর্ত্তির দিকে চাহিয়া—মুহূর্ত্তমাত্র সময় লইয়া সেই নীরব নৈশগগন কাঁপাইয়া প্রমোদকে চমকিত করিয়া বলিলেন—

 “না নরাধম, আমি তোর অপবিত্র রক্তে হস্ত কলঙ্কিত করব না, আমি তোকে মারব না, তোকে মারলে নীরজাকে পাবার উপায় নেই,