পাতা:ছিন্নমুকুল - স্বর্ণকুমারী দেবী.pdf/৫১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দশম পরিচ্ছেদ
৪৯

তুই মরলে নীরজা কোথায় কে বলবে? না, তোকে মারব না, মৃত্যুতে তোর মত লোকের শাস্তি হবে না, তোকে মারলে আমারি কলঙ্ক। আমি বিচারালয়ে তোকে শাস্তি দিব, পৃথিবীর এক সীমা থেকে আর এক সীমা পর্য্যন্ত তোর নাম, তোর দুর্ণাম তোর জঘন্য বিশ্বাসঘাতকতা ঘোষণা করব, পৃথিবীর সকলে তোকে দেখবামাত্র সর্পের মত ঘৃণায় স’রে দাঁড়াবে। তোকে মারব না, মারলে তোর পাপের শাস্তি হবে না”—বলিয়া সন্ন্যাসী আর মুহূর্ত্তমাত্র না দাঁড়াইয়া সেখান হইতে চলিয়া গেলেন। নিস্তব্ধ অন্ধকার রজনীকে কাঁঁপাইয়া, সেই কথাগুলি বজ্রের মত প্রমোদের কর্ণে প্রবেশ কবিল। সন্ন্যাসী চলিয়া গেলেন, প্রমোদ অনেকক্ষণ ধরিয়া বজ্রাহতের নায় স্তব্ধভাবে সেইখানে দাঁড়াইয়া রহিলেন। যখন তাঁহার চিন্তা করিবার শক্তি জন্মিল, তখন সন্ন্যাসীর সহিত যত কথা হইয়াছিল, পূর্ব্বাপর ক্রমে মনে পড়িতে লাগিল। কি করিয়া তিনি এ বিপদ্ হইতে উদ্ধার পাইবেন ভাবিতে লাগিলেন। মন এতই চঞ্চল, যে তখনই কাহারও সহিত ঐ বিষয়ে পরামর্শ করিতে ব্যস্ত হইলেন। কিন্তু এ কথা কাহাকে বলেন? যাহাকে তাহাকে বলা যায় না, বলিতে ইচ্ছাও করে না। তিনি ভাবিতে ভাবিতে যামিনীনাথকে ছাড়া আর পরামর্শ করিবার লোক দেখিলেন না। প্রথমতঃ যামিনীনাথ তাঁহার হৃদয়বন্ধু, দ্বিতীয়তঃ যামিনীনাথও সেই অরণ্যে গিয়াছিলেন, তিনিও নীরজাকে দেখিয়াছেন, তিনি সকলই জানেন, তিনিই এ সম্বন্ধে একমাত্র পরামর্শ দিবার উপযুক্ত পাত্র। প্রমোদ সেই রাত্রেই ব্যাকুলভাবে যামিনীনাথের বাড়ী যাত্রা করিলেন।