পাতা:ছুটির পড়া - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আলোক ও উত্তাপ ר "ל কোনোটিকে বা ছাড়িয়া দেয়। একখানি লালবণের কাচ কেবল লালবণের তরঙ্গ ছাড়িয়া দেয়, একখানি নীলবণের কাচ কেবল নীল ঢেউগুলি ছাড়িয়া দেয়, অপরগুলি শোষণ করে । আবার যেরূপ লালবণের আলোক আছে সেইরূপ নানা বর্ণের উত্তাপ-তরঙ্গও আছে । একখানি শুভ্ৰ কাচফলক সূর্যের উত্তাপ-তরঙ্গ প্রায় ছাড়িয়া দেয়, কিন্তু জ্বলন্ত অঙ্গারের উত্তাপ এবং পুথিবী যে উত্তাপ বিকিরণ করে সে-সমস্ত শোষণ করিয়া লয়। উনানের সম্মুখে বসিলে গায়ে তাপ লাগিবে, কিন্তু একটি কাচফলকের ব্যবধান দিয়া বসিয়া দেখিয়ো গায়ে তাপ লাগিবে না। অথচ কাচের মধ্য দিয়া রৌদ্রতাপ আসে । তোমরা বোধ করি এখন বুঝিয়া থাকিবে যে, দিনের বেলা জানালাদরজা বন্ধ করিয়া দিলে ঘর কেন অন্ধকার হয় । দেওয়াল জানালা প্রভৃতি দ্রব্য ঈথরের গতি কাড়িয়া লয়, ঈথর-তরঙ্গকে আপনাদিগকে অতিক্রম করিয়া যাইতে দেয় না। জানালা বন্ধ না করিয়া যদি সার্শি বন্ধ করিয়া দাও তবে ঘরে আলোক দেখিবে, কারণ পূর্বে বলিয়াছি যে কাচ আলোক-তরঙ্গ ছাড়িয়া দেয়। আর-একটি কথা বলি, রাত্রে কেন সূর্যালোক পাই না। আমাদের পৃথিবী গোল, এক সময়ে ইহার এক অর্ধে সূর্যকিরণ আঘাত করিতে পারে ; অপরাধের কোনো স্থলে পৌঁছিতে হইলে ভূপৃষ্ঠ ভেদ করিয়া যাইতে হইবে। কিন্তু পুথিবী স্বচ্ছ নহে অর্থাৎ আলোক-তরঙ্গ অবিরোধে ইহাকে অতিক্রম করিতে পারে না। যদি পৃথিবী স্বচ্ছ উপাদানেও নির্মিত হইত তাহ হইলেও ইহা ফুড়িয়া আলোক-তরঙ্গ যাইতে পারিত কি না সন্দেহ। এক ফুট জল ভেদ করিয়া আলোক-তরঙ্গ অনায়াসে বাহির হইয়া যাইতে পারে, কিন্তু ২০ ফুট জলের ভিতর দিয়া আলোক পাঠাইলে দেখিবে যে অর্ধেক আলো শোষিত হইয়াছে। পৃথিবী এত বৃহৎ যে, কাচের বা জলের ন্যায় স্বচ্ছ পদার্থে নির্মিত হইলেও হয়তো আলোকতরঙ্গকে অতিক্রম করিয়া যাইতে দিত না ।