পাতা:ছোটদের অপরাজিত - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বর্ষাকালের মাঝামাঝি অপু একদিন মাকে বলিল যে, সে স্কুলে পড়িতে যাইবে । সর্বজয়া আশ্চর্য হইয়া তার মুখের দিকে চাহিয়া বলিল, কোন ইস্কুলে রে ? —কেন, এই তো আড়াবোয়ালেতে বেশ ইস্কুল রয়েচে । -সে তো এখেন থেকে যেতে-আসতে চার ক্রোশ পথ । সেখেনে যাবি হেঁটে পড়তে ? সর্বজয়া কথাটা তখনকার মত উড়াইয়া দিল বটে, কিন্তু ছেলের মুখে কয়েকদিন ধরিয়া বার বার কথাটা শুনিয়া সে শেষে বিরক্ত হইয়া বলিল, যা খুশি করো বাপু, আমি জানি নে ! তোমরা কোনো কালে কারুর কথা তো শুনলে না ? শুনবে é না-সেই একজন নিজের খেয়ালে সারাজন্ম কাটিয়ে গেল, তোমার ও তো সে ধারা বজায় রাখা চাই । ইস্কুলে পড়বো ! ইস্কুলে পড়বি তো এদিকে কি হৰে ? দিব্যি একটা যাহোক দাড়াবার পথ। তবু হয়ে আসছে— এখন তুমি দা ও স্পেড়ে—তারপর ইদিকেও যাক, ওদিকেও যাক - দুই-এক দিনের মধ্যে সে মায়ের কাছে কথাটা আবার তুলিল । একবার শুধু তোলা নয়, নিতান্ত নাছোড়বান্দা হইয়া পড়িল । আড়বোয়ালের স্কুল দুই ক্রোশ দূরে, তাই কি ? সে খুব হাঁটিতে পরিবে এটুকু । সে বুঝি চিরকাল এই রকম চাষাগায়ে বসিয়া বসিয়া ঠাকুরপূজো করিবে ? বাহিরে যাইতে পরিবে না বুঝি ! তবু আরও মাস দুই কাটিল । স্কুলের পড়াশোনা সর্বজয়া বোঝে। না, সে যাহা বোঝে তাহ পাইয়াছে। তবে আবার ইস্কুলে পড়িয়া কি লাভ ? বেশ তো সংসার গুছাইয়া উঠিতেছে। আর বছর কয়েক পরে ছেলের বিবাহ-তারপরই একঘর মানুষের মত মানুষ । সৰ্বজয়ার স্বপ্ন। সার্থক হইয়াছে। কিন্তু অপুর তাহা হয় নাই। তাঁহাকে ধরিয়া রাখা গেল না— শ্রাবণের প্রথমে সে আড়বোয়ালের মাইনর স্কুলে ভর্তি হইয়া যাতায়াত শুরু করিল। So