পাতা:ছোটদের অপরাজিত - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৬৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পুরাতন আকাশটা যেন স্নেহে প্রেমে জ্যোৎস্না হইয়া গালিয়া ঝরিয়া বিন্দুতে বিন্দুতে নিজেকে নিঃশেষ করিয়া দিতেছে- টুপি.টুিপ-টুপটাপ” । আবার কান্না পায়- জ্যোৎস্নার আলোয় জানালার গরাদে ধরিয়া হাসিমুখে ও কে দাড়াইয়া আছে ? সর্বজয়ার দৃষ্টি পাশের জানালার দিকে - নিবদ্ধ হইল -বিস্ময়ে, আনন্দে রোগশীর্ণ মুখখানা মুহুর্তে উজ্জল হইয়া উঠিল--অপু দাড়াইয়া আছে।”-এ। অপু নয়--- সেই ছেলেবেলাকার ছোট্ট অপু এতটুকু অপু নিশ্চিন্দিপুরের বঁাশবনের ভিটতে এমন কত চৈত্ৰ-জ্যোৎস্না-রাতে ভাঙা জানালার ফাক দিয়া জ্যোৎস্নার আলো আসিয়া পড়িত যাহার দন্তহীন ফুলের কুঁড়ির মত কচি মুখে সেই অপু...ও'র ছেলেমানুষ খঞ্জন পাখির মত ডাগর ডাগর চোখের নীল চাহনি- চুল কেঁকুড়া কেঁকড়া-মুখচোরা, ভালমানুষ • লাজুক বোকা জগতের ঘোরপ্যাচ কিছুই একেবারে বোঝে না- “কোথায় যেন সে যায়-নীল আকাশ বাহিয়া বহু দূরে - বহু দূরের দিকে, সুনীল মেঘপদবীর অনেক উপরে --যায়---যায়যায়...যায় • • • মেঘের ফঁাকে যাইতে যাইতে মিলাইয়া যায়--- বুঝি মৃত্যু আসিয়াছে।--কিন্তু তার ছেলের বেশে, তাকে আদর করিয়া আগু বাড়াইয়া লইতে - এতই সুন্দর • • কি হাসি ? কি মিষ্টি হাসি ওর মুখের ! -- পরদিন সকালে তেলি বাড়ির বড়-বেী আসিল । দরজায় রাত্রে খিল দেওয়া হয় নাই, খোলাই আছে, বড়-বো আপন মনে বলিলরাত্রে দেখছি মা-ঠাকরুণের অসুখ বেড়েছে, খিলটাও দিতে পারেন নি । বিছানার উপর সর্বজয়া যেন ঘুমাইতেছেন। তেলি-বৌ একবার ভাবিল-ডাকিবে না-কিন্তু পথ্যের কথা জিজ্ঞাসা করিবার জন্য ডাকিয়া উঠাইতে গেল । সর্বজয়া কোনও সাড়া দিলেন না, নড়িলেনও না। বড়-বেী আরও দু-একবার ডাকাডাকি করিল, পরে হঠাৎ কি ভাবিয়া নিকটে আসিয়া ভাল করিয়া দেখিল । পরীক্ষণেই সে সব বুঝিল । 65